ঋণের বোঝা মাথায় রেখে ধার-কর্জ করে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিল দুইজনই। অনেক স্বপ্ন ছিল তাদের মা-বাবা আর স্বজনদের চোখে। ঋণের বোঝা শেষ হলেই সংসারে ফিরবে সুদিন। তবে হলনা সে সুদিনের দেখা। মালয়েশিয়ায় ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হলেন তারা।
তারা হলেন – কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামের শহিদ মিয়ার ছেলে মো. কামরুল হোসেন (২৫) ও একই গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. দুলাল মিয়া (৩২)। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ট্রেনের ধাক্কায় তাদের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন।
জানা গেছে, দুজনেই সম্প্রতি কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় এসেছিলেন। তারা একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রোববার রাতে সেলাঙ্গর রাজ্যের কাজাং কেটিএম পুনচাক উতামা জেড হিল ট্র্যাকে এ দুর্ঘটনায় নিহত হন এই দুই বাংলাদেশি।
এর আগে সোমবার সকালে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম বার্নামার প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন বাংলাদেশি ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে নিহত মো. দুলাল মিয়ার মা আনোয়ারা বেগম জানান, গত এক বছরে তিনি স্বামী এবং আরও দুই সন্তান হারিয়েছেন। চার ভাই পাঁচ বোনের সংসারে দুলাল ছিল সবার ছোট। আরেক সন্তান দেলোয়ার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন চট্টগ্রামে। ১৬ মাস আগে সংসারের হাল ধরতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও এনজিও থেকে ৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমায় দুলাল।
তিনি আরও বলেন, স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তানকে রেখে যায় মায়ের কাছে। দুলালের মৃত্যুতে এখন অথই সাগরে পড়েছেন তার মা। কী দিয়ে পরিশোধ করবে ঋণ, পুত্রবধূ ও দুই নাতনি নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন তিনি। এই চিন্তায় পুত্রশোকও মলিন হয়ে উঠছেন কখনো কখনো। তারপরও নিহত সন্তানের মুখটা শেষবারের মতো দেখতে চান তিনি। বারবার শুধু বলছেন আমার ছেলেকে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও বাবা।
এ বিষয়ে নিহত কামালের বাবা শহিদ মিয়া জানান, কামালের সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছে গত বুধবার রাতে। এই সোমবারে ফোনে জানতে পারি আমার ছেলে কামাল আর নাই। পিতা হিসেবে তার জন্য তো আর কিছু করার নাই, শুধু দেশের মাটিতে যদি তার দাফনটা করতে পারতাম। আমার ছেলের লাশটা দেশে এনে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই।