মে ১৮, ২০২৫

রবিবার ১৮ মে, ২০২৫

জাবি সায়েন্স ক্লাবের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো বিজ্ঞান ও গবেষণা বিষয়ক কর্মশালা

জাবি সায়েন্স ক্লাবের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো বিজ্ঞান ও গবেষণা বিষয়ক কর্মশালা
জাবি সায়েন্স ক্লাবের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো বিজ্ঞান ও গবেষণা বিষয়ক কর্মশালা/ছবি: প্রতিনিধি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাব (JUSC) এর আয়োজনে দিনব্যাপী “JUSC Research Workshop 2025” শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৭ মে) সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের সেমিনার কক্ষে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এ কর্মশালায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৭০ জনের মতো শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।

কর্মশালায় গবেষণার ধারণা তৈরি থেকে শুরু করে তা বাস্তবায়ন ও প্রকাশনার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। কর্মশালায় প্রথম সেশন পরিচালনা করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও খ্যাতনামা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এনামুল হক।

তিনি “Mastering Manuscript Writing – Ethics, Structure & Publication” বিষয়ে আলোচনা করেন। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত শীর্ষ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন তিনি। গবেষণা কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি বিএএস গোল্ড মেডেল (২০২৩) এ ভূষিত হন।

দ্বিতীয় সেশনে “Idea, Iteration, Impact: A Researcher’s Reflection” বিষয়ে আলোচনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাদিম শরীফ। তিনি ভাইরোলজি, বায়োইনফরমেটিক্স ও গাট মাইক্রোবায়োম নিয়ে কাজ করেন। তিনি The Lancet এবং Scientific Reports এর রিভিউয়ার হিসেবেও কাজ করেছেন।

এ সময় ক্লাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে দেশে গবেষক তৈরি করার জন্য। কিন্তু গবেষক তৈরি না হয়ে হচ্ছে অসংখ্য বিসিএস ক্যাডার।

প্রয়োজনে বিসিএস ক্যাডার তৈরির জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করা যেতে পারে। গবেষণায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করতে জাবি সায়েন্স ক্লাবের এ কার্যক্রমের প্রশংসা করেন তিনি। এসময় তিনি সবাইকে গ্লোবাল লিডার হওয়ার পরামর্শ দেন।”

ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শফি মুহাম্মদ তারেক বলেন, “সায়েন্স ক্লাবকে ধন্যবাদ জানাই এমন ফ্রুটলেস কাজে এতো বিজ্ঞানপ্রেমী মানুষকে একত্রিত করতে পেরেছে। আমরা গবেষণা শখ থেকে করি। নতুন জ্ঞান সৃষ্টির তৃষ্ণা থেকে গবেষণা করলে মানব কল্যাণে কাজে লাগবে। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা লেখা-লেখিতে দুর্বল।”

এজন্য মুখস্থ নির্ভর প্রাইমারি এডুকেশন সিস্টেমকে দায়ী করেন তিনি।

ক্লাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ফজলুল করিম পাটোয়ারী বলেন, “শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করতে আমার ভালো লাগে। আমাদের শিক্ষার্থীরা যত বেশি গবেষণামুখী হবে এবং দেশে গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ হবে, তবেই দেশ এগিয়ে যাবে। জাবি সায়েন্স ক্লাবের এমন আয়োজনকে আমি স্বাগত জানাই।”

এর আগে জাবি সায়েন্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মুসা এর সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ক্লাবের সভাপতি মো. সৌরভ। তিনি বলেন, “জাবি সায়েন্স ক্লাব বিজ্ঞানের প্রসার ও বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনের লক্ষ্যে দুই দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতের গবেষক তৈরিতে জাবি সায়েন্স ক্লাবের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।”

রিসার্চ ওয়ার্কশপের কনভেনর তানভীর মাজহার বলেন, “বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার ক্ষেত্র প্রচার ও প্রসারের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণাপত্র প্রকাশে আগ্ৰহী করে বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি সায়েন্স ক্লাব প্রতি বছরের ন্যায় এবারও “JUSC Scientific Research Workshop – 2025″ আয়োজন করেছে।

এই ধরনের কর্মশালাতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় অনেক বেশি আগ্ৰহী হয় এবং গবেষক হিসেবে নিজের পেশাকে বাছাই করার টনিক হিসেবে কাজ করে।”

এরপর কর্মশালায় অংশ গ্রহণকারীদের মধ্যে সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়। রিসার্চ ওয়ার্কশপের কনভেনরের দায়িত্ব পালন করেছেন ক্লাবের হেড অব সায়েন্টিফিক রিসার্চ তানভীর মাজহার, কো-কনভেনরের দায়িত্ব পালন করছেন কো-হেড অব সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইরফাতুল জান্নাত তানিয়া এবং হেড অব রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সাইফুল ইসলাম।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত এই বিজ্ঞান ও গবেষণা বিষয়ক ওয়ার্কশপটি অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, কৌতূহল এবং গবেষণার প্রতি আগ্রহকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

কর্মশালায় বিশেষজ্ঞদের মূল্যবান আলোচনা, ব্যবহারিক দিক-নির্দেশনা এবং অংশগ্রহণকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ একটি প্রাণবন্ত ও শিক্ষণীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এমন আয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক মনোভাব গড়ে তুলতে সহায়ক হবে এবং আগামী দিনে আরও উদ্ভাবনী গবেষণার অনুপ্রেরণা জোগাবে। এই রকম উদ্যোগ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকুক; এই আশা রাখি।

আরও পড়ুন