পাকিস্তানের কাছে হেরে এশিয়া কাপের সুপার ফোর শুরু করেছে বাংলাদেশ। আজ সুপার ফোরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছে টাইগাররা।
পাকিস্তানের দুই পেসার হারিস রউফ ও নাসিম শাহর বোলিং তোপে প্রথমে ব্যাট করে ৩৮ দশমিক ৪ ওভারে ১৯৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। '
অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ৫৩ ও মুশফিকুর রহিম ৬৪ রান করেন। রউফ ৪টি ও নাসিম ৩ উইকেট নেন। জবাবে ৬৩ বল বাকী রেখে জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। ইমাম উল হক ৭৮ ও মোহাম্মদ রিজওয়ান অনবদ্য ৬৩ রান করেন।
আজ লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টানা তৃতীয় ম্যাচে মত টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব। আগের ম্যাচ থেকে ১টি পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। ইনজুরিতে পড়া নাজমুল হোসেন শান্তর পরিবর্তে একাদশে নেয়া হয় লিটন দাসকে।
এ ম্যাচেও মোহাম্মদ নাইমের সাথে ইনিংস শুরু করেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মেহেদি হাসান মিরাজ। পাকিস্তানের পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির করা প্রথম ওভারে কোন রান নিতে পারেননি নাইম।
পরের ওভারে প্রথম স্ট্রাইক পান মিরাজ। পেসার নাসিম শাহর বলে ফ্লিক করতে গিয়ে মিড উইকেটে ফখর জামানকে ক্যাচ দেন মিরাজ। ওয়ানডেতে প্রথমবারের মত গোল্ডেন ডাক মেরে প্যাভিলিয়নে ফিরেন তিনি।
মিরাজের বিদায়ে তিন নম্বরে নেমে বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খুলেন লিটন। এরপর নান্দনিক শটে আরও তিনটি চার মারেন তিনি। দারুণ শুরুর পর পঞ্চম ওভারে আফ্রিদির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ৪টি চারে ১৩ বলে ১৬ রান করা লিটন।
লিটনের মত ভালো শুরু করে পেসার হারিস রউফের বলে বিদায় নেন নাইমও। পুল শটে বল আকাশে তুলে রউফের হাতে ক্যাচ দিলে ৪টি চারে ২৫ বলে নাইমের ২০ রানের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে।
নাইম ফেরার পর পাঁচ নম্বরে নামা উইকেটে সেট হবার চেষ্টা করেন । কিন্তু দশম ওভারে রউফের ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার গতির বল সামলাতে পারেননি ৯ বলে ২ রান করা হৃদয়।
৪৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে মহাবিপদে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় জুটি বাঁধেন দলের দুই সেরা খেলোয়াড় সাকিব ও মুশফিকুর। সাবধানে খেলে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন তারা। নাসিমের বলে ৩২ রানে জীবন পান সাকিব। ২১তম ওভারে বাংলাদেশের রান ১শ স্পর্শ করে। ২৮তম ওভারে ৫৩ বলে ওয়ানডেতে ৫৪তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাকিব।
হাফ-সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সাকিব। ফাহিম আশরাফের বলে পুল শট খেলে ডিপ মিড উইকেটে জামানকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেয়ার আগে ৭টি চারে ৫৭ বলে ৫৩ রান করেন সাকিব। মুশফিকের সাথে পঞ্চম উইকেটে ১২০ বলে ১০০ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন সাকিব।
অধিনায়ক ফেরার পর ৭০ বলে ওয়ানডেতে ৪৬তম হাফ-সেঞ্চুি পূর্ণ করেন মুশফিক। অর্ধশতকের পর শামীম হোসেনকে নিয়ে ইনিংস বড় করার চেষ্টা করেন মুশফিক। আফ্রিদিকে দারুণ এক শটে ছক্কা মেরে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেন শামীম। কিন্তু ৩৫তম ওভারে স্পিনার ইফতিখারকে মারতে গিয়ে ভুল টাইমিংয়ে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ১৬ রান করেন আক্রমণাত্মক এ ব্যাটার।
দলীয় ১৭৪ রানে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে শামীম আউট হওয়ার বাংলাদেশ ইনিংসে ধস নামে। নাসিম ও রউফের তোপে ৩৮ দশমিক ৪ ওভারে ১৯৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এসময় মুশফিককে ৬৪ ও তাসকিনকে শূন্য রানে শিকার করেন রউফ।
অন্যপ্রান্তে আফিফ হোসেনকে ১২ ও শরিফুল ইসলামকে ১ রানে বিদায় দেন নাসিম। ১৯ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৮৭ বলের ইনিংসে ৫টি চার মারেন মুশফিক। রউফ ৬ ওভার বোলিং করে ১৯ রানে ৪টি এবং নাসিম ৫ দশমিক চার ওভারে ৩৪ রানে ৩ উইকেট নেন।
জবাবে খেলতে নেমে সাবধানি ছিলেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার ফখর জামান ও ইমাম উল হক। চতুর্থ ওভারে শরিফুলের বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন জামান। কিন্তু সেটি লুফে নিতে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেননি নাইম। সপ্তম ওভারে তাসকিনের বলে ৩টি চার আদায় করে নেন ইমাম।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন শরিফুল। জামানকে ২০ রানে লেগ বিফোর আউট করেন তিনি। রিভিউ নিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেনি জামান। ইমামের সাথে ৫৫ বলে ৩৫ রানের সূচনা করেন জামান।
দ্বিতীয় উইকেটে ইনিংস মেরামতের কাজ করেন ইমাম ও অধিনায়ক বাবর। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তোলেন তারা। এসময় দু’টি রিভিউ হারিয়ে হতাশ বাংলাদেশকে উইকেট শিকারের আনন্দে মাতান তাসকিন। ১৬তম ওভারে বাবরকে বোল্ড আউট করেন তাসকিন। ২২ বলে ১৭ রান করেন বাবর। ইমামের সাথে ৩৮ বলে ৩৯ রান যোগ করেন বাবর।
দলীয় ৭৪ রানে বাবরের বিদায়ে ক্রিজে ইমামের সঙ্গী হন রিজওয়ান। ১৯তম ওভারে মিরাজের বলে লেগ বিফোর আউট আউট থেকে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান ইমাম। ২৩তম ওভারে পাকিস্তানের রান ১শ স্পর্শ করে। ২৫তম ওভারে মিরাজকে ছক্কা মেরে ওয়ানডেতে ১৯তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন ইমাম।
ইমাম ও রিজওয়ানের জুটি ভাঙ্গতে যখন ব্যর্থ সতীর্থরা, তখন ২৬তম ওভারে প্রথমবারের মত বোলিংয়ে আসেন সাকিব। প্রথম ৩ ওভারে ১৭ রান দেন তিনি। তবে নিজের অষ্টম ওভারে ইমামকে বোল্ড করেন মিরাজ। ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৮৪ বলে ৭৮ রান করেন ইমাম। তৃতীয় উইকেটে ১০৪ বল খেলে ৮৫ রান যোগ করেন ইমাম ও রিজওয়ান।
ইমাম যখন ফিরেন তখন পাকিস্তানের জয়ের জন্য ৩৫ রান দরকার ছিল। চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থেকে দলের প্রয়োজন মিটিয়েছেন রিজওয়ান ও আগা সালমান। ওয়ানডেতে ১১তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে ৬৩ রানে অপরাজিত থাকেন রিজওয়ান। ৭৯ বল খেলে ৭টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তিনি। ১২ রনে অপরাজিত থাকেন সালমান। বাংলাদেশের তাসকিন, শরিফুল ও মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর কলম্বোতে সুপার ফোরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলংকার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। আর ১০ সেপ্টেম্বর সুপার ফোরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে খেলবে পাকিস্তান।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC