জুন ২০, ২০২৫

শুক্রবার ২০ জুন, ২০২৫

হলের নামকরণে ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরলো জাবি ছাত্রশিবির

Rising-Cumilla-JU Chhatrashibir highlights historical perspective in naming hall
ছবি: প্রতিনিধি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নামবিহীন কয়েকটি হলের জন্য প্রশাসনের নতুন নাম প্রস্তাবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নাম জমা দিয়েছে, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির, জাবি শাখা।

এবিষয়ে জানতে চাইলে জাবি ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে জানানো হয়:

২০২৪ সালের ঐতিহাসিক “জুলাই গণঅভ্যুত্থান” আমাদের জাতীয় জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসেও এক অনন্য ঘটনাপ্রবাহ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে এই অভ্যুত্থান।

এ অভ্যুত্থান আমাদের শিক্ষার্থীদের ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার অদম্য সাহস, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং আত্মত্যাগের এক ঐতিহাসিক নিদর্শন হয়ে থাকবে।

এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চারটি আবাসিক হল পুনঃনামকরণের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

জাতীয় ইতিহাস, আত্মত্যাগ এবং ছাত্র-জনতার সংগ্রামের স্মৃতি অম্লান রাখতে হলে আবাসিক হলগুলোর নামকরণ হওয়া উচিত প্রাসঙ্গিক ব্যক্তিবর্গ বা ঘটনার নামে, যাঁরা সত্যিকার অর্থে দেশের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন অথবা যাঁদের আত্মত্যাগ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণামূলক হয়ে থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রস্তাবনা চাওয়ার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, হলগুলোর জন্য নিম্নলিখিত নতুন নামগুলো প্রস্তাব করছে:

বর্তমান নাম ও প্রস্তাবিত নাম:

১০ নং (ছাত্র) হল > শের-এ-বাংলা এ.কে. ফজলুল হক হল।

২১ নং (ছাত্র) হল > শহীদ শ্রাবণ গাজী হল/শহীদ আসহাবুল ইয়ামিন হল।

১৩ নং (ছাত্রী) হল > শহীদ নাফিসা হোসেন মারওয়া হল।

১৫ নং (ছাত্রী) হল > শহীদ ফেলানি খাতুন হল।

“বাংলার বাঘ” নামে খ্যাত শের-এ-বাংলা এ.কে. ফজলুল হক উপমহাদেশের একজন প্রজ্ঞাবান ও সর্বজনবিদিত রাজনীতিবিদ, যিনি বাংলা ও বাঙালির অধিকার রক্ষায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষায় আজীবন সংগ্রামী ছিলেন।

বাংলার প্রথম নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে এদেশের মানুষের ভূমির অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন।

তিনি জমিদার, তাদের তাবেদার অর্থনৈতিক মাফিয়া ও লাঠিয়াল বামপন্থী সন্ত্রাসীদের তৎপরতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত করেন এবং বাঙালি মুসলমানদের ভূমির অধিকার ফিরিয়ে দেন।

যা ছিলো এদেশের ইতিহাসে এক অনন্যসাধারণ দৃষ্টান্ত। জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর আপসহীন নেতৃত্ব ও স্বাধীনচেতা ভূমিকার জন্য তিনি অনুপ্রেরণামূলক।

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সাভারে শহীদ আসহাবুল ইয়ামিন ও শহীদ শ্রাবণ গাজী স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গিয়ে শাহাদাতবরণ করেন।

মালয়েশিয়ায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যয়নরত শহীদ শ্রাবণ গাজী ১৬ জুলাই, ২০২৪ দেশে ফিরে আসেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে।

৫ আগস্ট “মার্চ টু ঢাকা” কর্মসূচিতে জাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যাত্রাকালে সাভারে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের গুলিতে শহীদ হন শ্রাবণ গাজী।

মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (MIST) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন ছিলেন এ আন্দোলনে ঢাকার সাভারে শাহাদাতবরণকারী প্রথম শিক্ষার্থী।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (OHCHR) কর্তৃক প্রকাশিত একটি বিস্তারিত ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্টে ২০২৪ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত ছাত্র ও জনতার আন্দোলনে শাইখ আসহাবুল ইয়ামীন-এর শহীদ হওয়ার ঘটনাকে একটি “উল্লেখযোগ্য ও দৃষ্টান্তমূলক” বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

সাভারের একমাত্র নারী শহীদ এইচএসসি ফলাফল প্রত্যাশী নাফিসা হোসেন মারওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছিলেন।

৫ আগস্ট সাভার পাকিজা গার্মেন্টসের সামনের সড়কে পুলিশ, আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র আক্রমণে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন তিনি। তাঁর সাহসিকতা অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে এক অনন্য উদাহরণ।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের গু লি তে নিহত হন ১৫ বছরের ফেলানি। কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকা তাঁর নিথর দেহ সার্বভৌমত্ব ও মানবাধিকারের লঙ্ঘনের বিশ্বজুড়ে প্রতীক হয়ে ওঠে।

ফেলানি খাতুন আজ বাংলাদেশের ইতিহাসে শুধুমাত্র এক কিশোরীর নাম নয়, বরং তিনি ভারতীয় আধিপত্যবাদ, সীমান্ত সহিংসতা, এবং সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের একটি জ্বলন্ত প্রতীক।

জুলাই আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল প্রেক্ষাপটের কারণে আমরা আজ নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। তাঁদের আত্মত্যাগ আমাদের জাতীয় চেতনার শক্ত ভিত্তি নির্মাণে অনুপ্রেরণা যোগায়।

স্বৈরাচার ও আধিপত্যবাদমুক্ত এক সমাজ গড়ার লক্ষ্যে যারা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন তাদের সংগ্রামী চেতনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নির্দিষ্ট না হওয়া উল্লিখিত হলগুলোর নামকরণে আমাদের প্রস্তাবনা বিবেচনা করার দাবি জানাচ্ছি।

আরও পড়ুন