এতদিন আমরা জেনে এসেছি, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা স্বপ্নেই জীবনের আসল সুখ লুকিয়ে থাকে। মধ্যবয়সে এসে সেই স্বপ্নে কিছুটা ভাটা পড়ে, আর প্রবীণ বয়সে হয়তো কিছুটা স্থিতিশীলতা আসে, তবে সেই প্রথম তারুণ্যের আনন্দ আর ফিরে আসে না। জীবনের 'আত্মতৃপ্তি' নিয়ে এমন ধারণাই যেন গেঁথে ছিল আমাদের মনে।
তবে, এবার সম্ভবত সেই চিরাচরিত বিশ্বাসে ধাক্কা লাগতে চলেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত এক গবেষণা বলছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা! যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ (এনবিইআর) প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের 'সুখ' আসলে বাড়ে এবং তরুণ বয়সে সেই সুখের শিখর থাকে না!
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। ইংরেজি ভাষাভাষী ছয়টি দেশের (অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র) ওপর চালানো এই গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমান তরুণ প্রজন্মের সুখের 'সূচক' তাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
গবেষকদের দাবি, গত এক দশকে তরুণদের জীবন নিয়ে 'আত্মতৃপ্তির' পরিমাণ কমার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অত্যাধুনিক স্মার্টফোন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক ব্যবহার। এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য গবেষকরা উল্লিখিত ছয়টি দেশের ১১টি ভিন্ন ভিন্ন জরিপের ফলাফল গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে যে, বয়ঃসন্ধি এবং তার পরবর্তী কয়েক বছর, অর্থাৎ ১২ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যেই জীবন নিয়ে 'অসুখী' মনোভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এই সময়ে অনেক তরুণের মধ্যে হতাশা এবং মানসিক যন্ত্রণার তীব্রতা তাদের ঠিক আগের প্রজন্মের তুলনায় অনেক বেশি।
অন্যদিকে, বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে চিত্রটি সম্পূর্ণ বিপরীত। দেখা গেছে, সময়ের সাথে সাথে তাদের জীবন নিয়ে আত্মতৃপ্তির মাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে।
গবেষকরা মনে করছেন, কোভিড-১৯ মহামারী তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হতাশা বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। এর পাশাপাশি ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তার এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাও তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
গবেষকরা ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্রমবর্ধমান প্রবণতার সঙ্গে 'সুখ' কমে যাওয়ার একটি সুস্পষ্ট সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। এই গবেষণার সহ-গবেষক ডেভিড জি ব্ল্যাঞ্চফ্লাওয়ার আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, "ইন্টারনেটই প্রধান অনুঘটক। এর বাইরে অন্য কোনো কারণ দিয়ে এই পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না।"
এই গবেষণার ফলাফল অন্যান্য সাম্প্রতিক গবেষণাকেও সমর্থন করে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭৫ শতাংশ আমেরিকান তরুণ স্মার্টফোন ছাড়া থাকলে তুলনামূলকভাবে বেশি 'সুখ অনুভব' করেন। একই বছর আরেকটি গবেষণায় দাবি করা হয়, ইউরোপের মধ্যে ব্রিটিশ তরুণদের জীবন নিয়ে আত্মতৃপ্তির হার সবচেয়ে কম, এবং এর প্রধান কারণ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাবকেই দায়ী করা হয়।
শুধু পশ্চিমা দেশগুলোতেই নয়, এই প্রবণতা আফ্রিকা মহাদেশেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে জানান ব্ল্যাঞ্চফ্লাওয়ার। তিনি 'আফ্রিকার তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য' শীর্ষক একটি গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যেখানে দেখা গেছে যারা নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC