মে ২৪, ২০২৫

শনিবার ২৪ মে, ২০২৫

সাম্য, দ্রোহ ও প্রেমের কবি নজরুলের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী

সাম্য, দ্রোহ ও প্রেমে কবি নজরুলের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী
সাম্য, দ্রোহ ও প্রেমে কবি নজরুলের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী/প্রতীকি ছবি/এআই জেনারেটেড/রাইজিং কুমিল্লা

১. আজ ২৪ই মে ২০২৫ সাল। আজ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মদিন। তিনি ১৮৯৯ সালের ২৪ মে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শতবছর পরও বাঙালি সাহিত্যিক,কবি,লেখক,সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম তিনি।

গান,কবিতা,উপন্যাসসহ বাংলা সাহিত্যের সর্বত্রই তার বিচরণ। ‘অগ্নিবীণা’,’বিষের বাঁশি’,’দোলনচাঁপা’ তারউল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। জীবন দশায় তিনি মৃ্ত্যুক্ষধা,কুহেলিকা ও বাঁধনহারা নামে তিনটি উপন্যাস লিখেছেন; গজল: যাবি কে কে মদিনায়, তওফিক দাও খোদা, হে মদিনার নাইয়া, গান:আকাশে আজ ছড়িয়ে দিলাম প্রিয়,শুকনো পাতার নুপুর পায়ে ইত্যাদি।

২. আজ বিশ্ব যুদ্ধের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করছে। ফিলিস্তিনিরা নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পুড়ছে অর্থনৈতিক জাঁতাকলে বন্দী থাকা মধ্যবর্তী শ্রেণির মানুষের জীবন। দুর্বলরা প্রতিনিয়ত হচ্ছে প্রতারণার শিকার।

জাতিগত দাঙ্গা ক্রমশ বেড়ে চলছে। এই পরিস্থিতিতে মনে পড়ে কাজী নজরুল ইসলামের “বিদ্রোহী”কবিতাটি। কাজী নজরুল ইসলাম সেই শুরু থেকে সাম্যের গান গেয়েছেন। প্রতিবাদ করেছেন সমাজের শোষক শ্রেণির বিরুদ্ধে।

পৌছে গিয়েছিলেন কুলি মজুরের জীবনের গভীরে পর্যন্ত।তিনি কামনা করেছেন এমন বিশ্ব যেখানে থাকবে শান্তি, থাকবে না হিংসা,বিদ্বেষ। তার গজল আমাদের মনে করিয়ে দেয় আসলে প্রকৃত ধর্ম কেমন হওয়া দরকার। সে জন্য তিনি বলেছেন —“ত্যাগ চাহি,মর্সিয়া ক্রন্দন চাই চাহি না”।

৩. নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কতটুকু আমরা সফল হতে পেরেছি?

কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন “বল বীর,চির উন্নত মম শির”। সেই বীরত্বে হয়তো আমরা আমাদের অধিকার আদায় করতে পেরেছি।ফ্যাসিস্টদের দেশ থেকে বিতারিত করতে পেরেছি। তবে আজও কি আমাদের বাংলাদেশ সোনার বাংলায় পরিণত হতে পেরেছে? আজও আমাদের সমাজে জাতিগত,শ্রেণিগত বৈষম্য রয়ে গেছে।

আজও আমরা পথে পথে খুঁজে পাই সেই সব মানুষদের যাদের নেই কোনো পরিচিতি। নেই বেঁচে থাকার ঠিকানা। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি , অসৎ লোকদের কর্মকাণ্ড, ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অপব্যবহার,চাঁদাবাজিসহ নানা বিষয় আমাদেরকে অসহনীয় করে তুলেছে।

কাজী নজরুই ইসলামের “সংকল্প” কবিতাটি আমাদের শিশুরা মনের মধ্যে লালন করতে পারছে না। তারা যখন কিশোর বা কিশোরী হচ্ছে তখন নব উদ্দীপনায় এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে তারা ছড়িয়ে যাচ্ছে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ও মাদকাসক্তে।

তাই শিক্ষকদেরকে কাজী নজরুল ইসলামের সে মর্মকথা ও বাণী তা শিশুদের মাঝে ছোটবেলা থেকে এমনভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে যে তারা যাতে সমাজের কল্যাণমুখী চিন্তা চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়।

৪. ভবিষ্যৎ সমাজ যতই বিজ্ঞানভিত্তিক হোক না কেন মানুষের মনুষ্যত্ব সত্তার বিকাশ সাধন দরকার সমাজকে, দেশকে টিকিয়ে রাখতে। কাজী নজরুল ইসলাম সেই সত্তার জাগরণে তার সাহিত্য নিয়েছেন আমাদের বাংলা ভাষায়।

তিনি ঐতিহ্যকে লালন করেছেন। বিভিন্ন মুসলিম ঐতিহ্য ও হিন্দু পুরাণের মাধ্যমে একই গাছের ছায়াতলে এনেছেন হিন্দু-মুসলিম সবাইকে। তাই সমাজের কামার কুমোর থেকে থেকে অভিজাত শ্রেণিকে দেখতে চেয়েছেন একই সুরে সাম্যের ধারায়।

বাংলাদেশের জাতীয় কবি বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে যেসকল দিক আকার ইঙ্গিতে যেভাবে তার সাহিত্যে তুলে ধরেছেন সেগুলো লালন করে সোনার বাংলা বিনির্মাণ করতে পারলে ই বাংলা ও বাঙালি জাতি সার্থক হবে।

 

লেখক: মো.রিমেল

শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও পড়ুন