জুলাই আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা এক দফা দাবিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গদি বাঁচাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষকদের ডাকা একটি মিটিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশ ব্যাপী তুমুল সমালোচনা ঝড় শুরু হয়। যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ।
গত বছরের ৪ই আগস্ট অনুষ্ঠিত ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের ঐ ভিডিওতে দেখা যায় ববির তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একটা অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে শেখ হাসিনরে পাশে দাঁড়িয়ে যেকোনো উপায়ে সরকার পতন ঠেকাতে শিক্ষকদের বদ্ধপরিকর হতে দেখা যায় ।
সভায় জুলাই আন্দোলন চলাকালীন নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সমর্থনে বিবৃতি দেয়া শিক্ষকদের বিভিন্ন হুমকি দেয়া হয়। এমনকি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ঐ সময়ের সভাপতি ড. তারেক মাহমুদ আবির আঁধার কেটে গেলে সবাইকে মুখোমুখি করার হুমকি দিয়েছেন।
এছাড়াও নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক সমাজের বিবৃতিতে সাক্ষর করায় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দীনকে তোপের মুখে পড়তে হয় ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় উক্ত মিটিং এ অংশগ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর আব্দুল কাইয়ুম, শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক তারেক মাহমুদ আবিরসহ শতাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।
উক্ত অনলাইন সভায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন চৌধুরী বলেন," শিক্ষার্থীদের ঘোষিত এক দফার কোনো যৌক্তিকতা নেই, আমি বিশ্বাস করি না। আমি এই আন্দোলনে যারা নেমেছে তাদের ঘৃণা করি,এই আন্দোলন প্রত্যাখ্যান করি। আমরা সবাই আওয়ামী লীগে অর্থাৎ শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত তাই আমাদের শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়ানো দায়িত্ব,সময় এসেছে প্রমাণ করার। "
ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আরিফ হোসেন তার বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম কে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলে আখ্যা দিয়ে বলেন,"যারা শেখ হাসিনাকে হঠাতে এক দফা ঘোষণা দিয়েছে আমরা তাদের প্রতিহত করতে চাই।"
এ সময় কান্না জড়িত কন্ঠে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন দিল আফরোজ খানমকে বলতে শোনা যায় , আমি বিশ্বাস করি এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নাই ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিন খান লিখেন, এই ভিডিওটা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কতটা লজ্জার এটা অবর্ণনীয়। প্রথম স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয়ের যে গর্ব বর্তমান প্রশাসন আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন করে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে।
আজকে যদি ফ্যাসিবাদের পতন না হত তাহলে যেসব শিক্ষক কটু কথা, অবমাননা, লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার শিকার শিকার হচ্ছে তারা বুক ফুলিয়ে ববির মাটিতে আওয়ামী লীগার বলে গর্বের সাথে পদচারণা করতো।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শরিফ হোসাইন আহম্মেদ চোধুরী লিখেন, উনারা কীভাবে নিজেদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিচয় দিচ্ছেন? গতবছর ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত দেশব্যাপী এতগুলো নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটলো, সে ব্যাপারে একজন শিক্ষকও সমবেদনা প্রকাশ করলেন না, বিষয়টি আলোচনার প্রসঙ্গেও আনলেন না ।
রাজনৈতিকভাবে প্রত্যেকেরই একটা আদর্শিক অবস্থান থাকতে পারে। কিন্তু আমার বুঝে আসেনা একজন শিক্ষক এতটা দেউলিয়া, দলকানা বা দলদাশ কীভাবে হতে পারেন? সেই দুঃসময়ে যে সকল মেরুদণ্ডসম্পন্ন মানবিক শিক্ষক নিপীড়নবিরোধী বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন এবং নিজের অবস্থানে সুদৃঢ় ছিলেন তাদেরকে অবশ্যই পুরস্কৃত করা উচিত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জাহেদুল কবির লিখেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এইসব শিক্ষকেরা শিক্ষক নাকি শিক্ষক নামের কলঙ্ক যারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না তারা কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলো। শিক্ষকের মধ্যে কমপক্ষে ন্যূনতম মনুষ্যত্ববোধ থাকা উচিত। ন্যায় ,অন্যায় এর বিবেচনা বোধ থাকা উচিত। আমাদের জাতিকে মেধাশূন্য করে দিতে আর দশ বছর হলেই যথেষ্ট ছিল।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC