
নদীমাতৃক বাংলাদেশে বর্ষার শেষে আসে শরৎকাল। শরৎকাল প্রকৃতিতে নিয়ে আসে সৌন্দর্যের ভান্ডার। এ সময় প্রকৃতি আপন সৌন্দর্যে মেতে ওঠে। নদীর পাশে,পাহাড় ঘেষে কাশফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃতি যেন এক অনন্য মাত্রায় পৌঁছে যায়। তখনই জীবনানন্দ দাশের উক্তি মনে পড়ে যায়ঃ “আকাশে বেলা ফুরায়; শরৎ আসে। কাশবন উতলা হাওয়ায় হেলে যায় গোধূলির পাশে।”
কুবি যেন এক কাশফুলের স্বর্গরাজ্য।ক্যাম্পাসের প্রতিটি আনাচে-কানাচে পাহাড় ঘেষে কাশফুল মেতে উঠেছে। কারণ,শরৎকাল মানেই প্রকৃতি ও পরিবেশের এক নৈসর্গিক বন্ধন। যেখানে কাশফুল ফোটে, সাথে মেতে ওঠে পরিবেশ। এ সময়ে প্রকৃতি তার সৌন্দর্য প্রকাশে কমতি রাখে না। ঠিক তেমনই যেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল মাঠির ক্যাম্পাসে পাহাড় ঘেষে বেড়ে ওঠা প্রতিটি কদমে যেন প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখা যায়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র একটা বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়,বরং এ যেন প্রকৃতির এক সৌন্দর্যের অভয়ারণ্য। পাহাড় আর প্রকৃতির কারণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিকভাবেই সুন্দর। পাহাড়ের গা ঘেঁষে বেড়ে ওঠা কাশফুলের সৌন্দর্য যেন তার মাত্রা দ্বিগুণ করেছে। শুভ্র কাশফুলগুলো শরতের বার্তা দিয়ে শুরু করে ,আর রিক্ত শীতের আগমনে হারিয়ে যায়।
সবুজ গাছপালা ও পাহাড়ের মধ্যে উঁকি দেওয়া কাশফুলগুলো প্রকৃতিতে এনেছে প্রাণ। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী ও প্রকৃতিপ্রেমিদের কাছে এ যেন এক স্বপ্নময় জায়গা। সকালে যখন শিক্ষার্থীরা ব্যায়ামের জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে খেলতে যায়,ঠিক তখনই কাশফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়। এ শুভ্র ফুলগুলো যেন তাদের মনকে সজীব করে দেয়। প্রফুল্ল মন নিয়ে দিনটা শুরু হয়। আবার যখন, দুপুরের তপ্ত গরমে ক্লান্ত হয়ে যখন ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা বের হয় ঠিক তখনই সবুজ প্রকৃতিতে ফোটে ওঠা কাশফুলগুলো সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দেয়।
ক্যাম্পাসের গেইট থেকে হাঁটতে হাঁটতে শহীদ মিনারে যাওয়ার পথে,রাস্তার দুই ধারে দেখা যায় সাজানো-গোছানো অসংখ্য গাছপালা। ক্যাম্পাসের উঁচু নিচু পাহাড়ি পথ ধরে সামনে অগ্রসর হলে দেখা যায় এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য । পাহাড়ের কোল ঘেষে বেড়ে উঠা এই কাশফুলের স্বর্গরাজ্যের কোথাও উঁচু আবার কোথাও নিচু ঢেউ খেলানো। প্রকৃতি প্রেমিদের কাছে ফুলগুলো যেন তার সৌন্দর্য মেলে দিয়েছে। সৌন্দর্যের এ মিলনমেলা দেখতে প্রতিদিনই প্রকৃতিপ্রেমীরা এখানে ভীড় করে। বাতাসে কাশফুলের এদিক সেদিক হেলে যাওয়া প্রতিটি প্রকৃতি প্রেমির মনকে আন্দোলিত করে। হাঁটতে আসা পথিকরা কিছু সময় দাঁড়িয়ে এ সৌন্দর্য উপভোগ করেন। কেউ আবার প্রিয় মানুষের সাথে মোবাইলে ছবি তুলেন।
লেখক – রাকিবুল ইসলাম সৈকত, শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়