বিশ্বের ইতিহাসে অধিকাংশ শাসকরাই ছিলো শোষক। শোষকের রাজ্যে সবাই হবে শাসকের দাস। আর এই দাসত্ব সাধারণ জনতা নতজানু হয়ে মেনে নিচ্ছে অনায়াসে। জনতা জানে তাদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন ও অবিচার করা হচ্ছে। তবু ও তারা কেন কথা বলছে না? এর পিছনে কারণ হলো আধিপত্য। এই আধিপত্য হতে পারে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মতাদর্শের মাধ্যমে।
যার ফলে শাসক শ্রেণীর শোষণ আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। যা আমরা সাধারণ বিষয় হিসেবে মেনে নি। কিভাবে শাসক গোষ্ঠী তাদের নিজেদের সুবিধার জন্য সাধারণ মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করে তা নিয়ে অধ্যাপক আন্ত্যনিও গ্রামছি কথা বলেছিলেন।
তিনি বলেন আধিপত্য বিস্তার করা হয় দুই ভাবে : যেমন প্রথমত সুশীল সমাজের মাধ্যমে, তাহলে এবার বুঝা যাক সুশীল সমাজের মাধ্যমে কিভাবে আধিপত্য বিস্তার করা হয়। প্রথমে জানতে হবে সুশীল সমাজে কাদের নিয়ে গঠিত। সুশীল সমাজ হলো অরাজনৈতিক সংগঠন যারা নিঃস্বার্থ ভাবে সমাজের উন্নয়নের জন্য মানুষের অধিকারের জন্য কথা বলে। যাদের সমাজে অনেক মর্যাদা থাকে। যেমন: শিক্ষক, ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার ইত্যাদি। দ্বিতীয়ত মাধ্যম হলো রাজনৈতিক সমাজ, এবার রাজনৈতিক সমাজ হলো সরকার কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারী। যারা দেশের শান্তি রক্ষায় কাজ করে। যেমন: পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ইত্যাদি।
প্রতিটি দেশের এই দুইটি সমাজ হওয়া দরকার সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সর্বদা সচ্চার হওয়া। কিন্তু অধিকাংশ দেশের শাসক গোষ্ঠী এই দুই শ্রেণীকে ব্যবহার করে তাদের শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখে। শাসক গোষ্ঠী সুশীল সমাজের মাধ্যমে তাদের মতাদর্শ সমাজের মধ্যে প্রচার করে। এই জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গুলো যেমন: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস, সংগঠন।
যার ফলে শাসক গোষ্ঠীর অনুকূলে অবস্থা তৈরি হয়ে যায়। শাসক গোষ্ঠী যখন কোনো আইন বা পদক্ষেপ নেয় সেটি মূলত তাদের সুবিধার্থে নেওয়া হয়। জনতার কথা না যতটুকু মাথায় রাখে তার চাইতে নিজের স্বার্থ হাসিল করা তাদের উদ্দেশ্য থাকে। দেশের উন্নয়মূলক কাজের নামে যতটা উন্নয়ন করা হয় এর চাইতে দশগুণ বেশি টাকা লুট করে ও নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রেখার জন্য মাধ্যমে হিসেবে ব্যবহার করে শাসক গোষ্ঠী। সাধারণ জনতা কে বলা হয় দেশের জন্য কাজ করছে।
এতে সাধারণ মানুষের তাদের উপর করা শাসকের শোষণকে অনায়াসে মেনে নেয় । তারা মেনে নেয় এই শোষণ তাদের ভালোর জন্য করা হচ্ছে। যা অতীতে পশ্চিমা দেশগুলোতে কৃষ্ণাঙ্গদের করা হতো। আধিপত্য দুইভাবে বিস্তার করে শাসক গোষ্ঠী: প্রথমত জনগণের সম্মতিতে, শাসক গোষ্ঠী যখন একটি দেশের মতাদর্শে আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয় তখন তাদের শাসন কার্য সম্পাদন করা সহজ হয়ে যায়। জনগণ তাদের যে কোনো কাজে একমত প্রকাশ করে। যেমন: কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়কে সভ্য করার যে অভিজান।
দ্বিতীয়ত বল প্রয়োগ করে , শাসক গোষ্ঠী যখন জনগণের সম্মতি পেতে ব্যর্থ হয় তখন তারা বল প্রয়োগ করে তাদের শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে। যেমন: ইতালির ইতিহাসে হিটলারের শাসন ব্যবস্থা।
সচেতনতার নামে মানুষের মাঝে তৈরি করা হয় আধিপত্যের বলয়। এতে প্রকৃত সচেতন তৈরি হয় না।এইভাবে শাসক গোষ্ঠী জনগণের উপর আধিপত্য বিস্তার করে।বিশ্বের ইতিহাসে এইভাবে প্রত্যেক অত্যাচারী শাসকরা তাদের শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছে। তবে ইতিহাসের পাতায় দেখলেই বুঝায় যায় কোনো শাসক চিরস্থায়ী নয়।একদিন তাদের পতন হবেই। সবকিছুর শেষ আছে।
শাসক গোষ্ঠীর শোষণ থেকে বাঁচার অন্যতম উপায় হবে জন সচেতনতা।"মিথ্যা সচেতনতা" থেকে বের হয়ে "সত্য সচেতন" প্রতিষ্ঠান করতে হবে। শাসকগোষ্ঠীর যা বুঝিয়েছে তা নিরব ভাষায় মেনে নেওয়া যাবে না।জন সাধারণ শাসক গোষ্ঠী কথা মানার আগে নিজের জ্ঞান - বুদ্ধি দ্বারা বিচার বিবেচনা করতে হবে। জনগণের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা থাকতে হবে। সুশীল সমাজেকে হতে হবে নিরপেক্ষ। বুদ্ধিজীবী সমাজ কোনো প্রকারে শাসকদের শোষণের পক্ষে কথা বলতে পারবে না।
বুদ্ধিজীবী সমাজ রাজনৈতিক দলের পদতলে আশ্রয় নিয়ে শাসকদের মতাদর্শ প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন: একজন শিক্ষক হলো বুদ্ধিজীবী সমাজের একটি অংশ। সমাজে শিক্ষকদের মর্যাদা অনেক উপরে। তার কথা মানুষ শুনে ও মানে। এখন একজন শিক্ষক যদি কোনো রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ মানুষের মাঝে প্রচার করে তাহলে মানুষ খুব সহজে প্রভাবিত হবে। তাই শিক্ষকদের সর্বদা সোচ্চার থাকতে হবে মানুষের অধিকারের বিষয়ে।
রাষ্ট্রের যেসব বাহিনী আছে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
অন্যথায় শাসক গোষ্ঠী যখন জনগণের সম্মতি পেতে ব্যর্থ হয় তখন বাহিনী দ্বারা জনগণকে চাপ প্রয়োগ করে। যা আমরা আগষ্ট মাসে বাংলাদেশ দেখেছি। সরকারের বিপক্ষে ছাত্র জনতা যাওয়ার ফলে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে পুলিশ বাহিনী। দুই পক্ষের সংঘর্ষে অনেক মানুষ আহত ও নিহত হয়েছে। দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।
তাই বাহিনীগুলোকে সর্বদা নিরপেক্ষ হতে হবে। যদি এটি বহুকাল থেকে চলে আসছে তাই একদিন পরিবর্তন করা সম্ভব না। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া তবে জনগণের সম্মিলিত প্রয়াসে পরিবর্তন আসতে পারে রাষ্ট্রের কাঠামোতে। যা একটি রাষ্ট্র ও জাতিকে আলোর পথ দেখাবে।
আছমা আক্তার
শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC