
পবিত্র মাহে রমজান মাসে রোজাদারদের মধ্যে দাঁত ব্রাশ করা নিয়ে বহুল প্রচলিত কিছু কুসংস্কার রয়েছে। অনেকে মনে করেন রোজায় দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙে যায়। এই কুসংস্কারের ফলে মুখে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি, এবং বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তেমনি দীর্ঘ সময় দাঁত ব্রাশ না করে অনেকেই মুখের দুর্গন্ধে ভোগেন এবং তাদের আশেপাশের মানুষদেরও বিরক্ত করেন।
হাদিসে কুদসিতে রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধের কথা উল্লেখ থাকলেও, মৌলিকভাবে এটি ভালো নয় এবং দূর করা উচিত। ইসলামি চিন্তাবিদদের মতামত অনুযায়ী, রোজায় দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভাঙে না। তবে ব্রাশ করার সময় সতর্ক থাকতে হবে যাতে পেস্ট পেটে না চলে যায়।
তবে মুখের এই গন্ধের বিষয়ে অনেক রোজাদারকে বলতে শোনা যায়, রোজাদার ব্যক্তির মুখের গন্ধও ভালো বা রোজাদার ব্যক্তির মুখের গন্ধে বিরক্ত হওয়া যাবে না। কিন্তু না, বিষয়টি হাদিসে এসেছে এভাবে–
হাদিসে কুদসিতে আছে, রাসূল সা. বলেন, যার হাতে আমার প্রাণ, তার শপথ, রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ মেশকের তুলনায় আল্লাহ তাআলার নিকট অধিক প্রিয়। সে আমার উদ্দেশে তার পানাহার ও প্রবৃত্তিকে পরিত্যাগ করে, রোজা আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান। পুণ্যকর্মের প্রতিদান দশগুণ। (বুখারি, হাদিস ১৮৯৪)
হাদিসটি দ্বারা বুঝা যায়, রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ মেশকের তুলনায় আল্লাহ তাআলার নিকট অধিক প্রিয় কারণ এ গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে তার ইবাদত পালন ও আল্লাহ তাআলার হুকুমের অনুবর্তী হওয়ার ফলে।
তবে, মুখের গন্ধ মৌলিকভাবে প্রিয় ও ভালো নয় এবং তা দূর করার ব্যাপারে বান্দার উপর কোন নিষেধাজ্ঞাও নেই। তাছাড়া, এ দুর্গন্ধের ফলে আপনার আশপাশের মানুষজনও বিড়ম্বনায় পড়তে পারে। যা কখনও কাম্য নয়।
ফলে বলা যায়, অবশ্যই জোর করে মুখে দুর্গন্ধ রাখা যাবে না। ইসলামি চিন্তাবিদরা বলছেন, দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভাঙে না। কারণ, টুথপেস্ট তো কেউ খায় না। তবে ব্রাশ করার সময় সতর্ক থাকতে হবে যে পেস্ট পেটে চলে না যায়। ভুল করে পেস্ট যদি কণ্ঠনালীতে বা পেটে চলে গেলে কিন্তু রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।
এছাড়াও কেউ কেউ বলেছেন, টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করলে রোজা মকরুহ হয়ে যায়। তবে, ভেঙে যায় এমনটা কেউই বলেননি।
ইসলামি চিন্তাবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ হচ্ছে, অল্প পরিমাণ পেস্ট নিন। মিন্টের গন্ধ কম এরকম পেস্ট ব্যবহার করুন। তবে টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে ভয় পেলে, সবথেকে ভালো সমাধান হচ্ছে গাছের সরু ডাল থেকে তৈরি মিসওয়াক বা দাঁতন ব্যবহার।
সুনানে আবু দাউদে যায়েদ বিন খালেদ আলজুহানী (রা.) বরাতে এক হাদিসে তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি—আমার উম্মতের জন্য কষ্টের আশঙ্কা না হলে তাদের ওপর মিসওয়াককে প্রতি নামাজের জন্য ফরজ করে দিতাম।
এজন্য যদি ব্রাশ করতেই হয় তাহলে সবচেয়ে ভালো হয়, সাহরি শেষে পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা, আবার ইফতারের পরও দাঁত ব্রাশ করা যায়। আর দিনের বেলা মিসওয়াক ব্যবহার করা।
মহানবী (সাঃ) মিসওয়াক ব্যবহার করতেন। আমরাও তার অনুসরণ করে মিসওয়াক ব্যবহার করতে পারি।। তাতে আমার রোজা নিয়ে কোনো প্রশ্নও উঠবে না, উলটো সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। তাছাড়া, মিসওয়াক করে নামাজ পড়লে তা উত্তম।