বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই, ২০২৫

রেকর্ড ভাঙা মাছ উৎপাদনে নতুন উচ্চতার পথে বাংলাদেশ

Rising Cumilla - fish farming
ছবি: সংগৃহীত

মাছে-ভাতে বাঙালি প্রবাদ যেন নতুন করে সার্থকতা পেতে যাচ্ছে! ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে মাছের উৎপাদন ৫০ লাখ টন ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে। ওই বছর অর্থবছরে মোট ৫০ লাখ ১৮ হাজার টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের উৎপাদন এখনো সুনির্দিষ্টভাবে সন্নিবেশ করেনি সরকার। তবে মৎস্য অধিদপ্তর আশাবাদী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই উৎপাদন আরও বাড়বে।

মাছ উৎপাদনে শুধু অভ্যন্তরীণ রেকর্ড নয়, বিশ্ব মঞ্চেও দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর (২০২৪) জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা (এফএও) কর্তৃক প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড স্টেট অব ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার-২০২৪’ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মিঠাপানির মাছ আহরণে বিশ্বে তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।

এদিকে ২০২৩-২৪ সালে বাংলাদেশ প্রায় ৪৭ লাখ হেক্টর জলাশয় থেকে মাছ আহরণ করেছে। এর মধ্যে চাষের মাছের পরিমাণ ছিল ২৯ লাখ ৭৮ হাজার টন, যা মোট উৎপাদনের সিংহভাগ। উন্মুক্ত জলাশয় থেকে আহরিত হয়েছে ১৪ লাখ ১১ হাজার টন মাছ, এবং বাকিটা এসেছে সমুদ্র থেকে।

বিশেষ করে, উন্মুক্ত জলাশয় থেকে আহরিত মাছের প্রায় অর্ধেকই হলো ইলিশ। ঐ বছর ৫ লাখ ২৯ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল ওহাব গণমাধ্যমকে বলেন, “দেশের হাওর ও বিলগুলোতে ছোট এবং মাঝারি অন্য মাছের জাতগুলোর প্রজননের সময় সুরক্ষা দেওয়া উচিত। তাহলে দেশে পুষ্টিকর ছোট মাছের উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব হবে।”

দেশে ২৬১ প্রজাতির মাছের উন্মুক্ত জলাশয় থাকলেও, মোট মাছের ৫৬ শতাংশই আসছে পুকুর থেকে। গত তিন দশকে পুকুরে মাছ চাষের কারণে উৎপাদন প্রায় ছয় গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পুকুর ছাড়াও বিল ও নদীতে পরিকল্পিত মাছ চাষ দেশের সামগ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।

পরিসংখ্যান বলছে, গত এক যুগে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশের বেশি বেড়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে মোট উৎপাদন ছিল ৩০ লাখ ৬২ হাজার টন। বিগত চার দশকে বাংলাদেশের মোট মাছ উৎপাদন ছয়গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে; ১৯৮৩-৮৪ সালে যা ছিল মাত্র ৭ লাখ ৫৪ হাজার টন।

মাছের এই উল্লেখযোগ্য উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে মাথাপিছু দৈনিক মাছ গ্রহণের হারও বেড়েছে। ৬০ গ্রাম চাহিদার বিপরীতে এখন প্রতিদিন ৬৭.৮০ গ্রাম মাছ গ্রহণ করা হচ্ছে। দেশের মোট জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান ২.৫৩ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপিতে এই উপ-খাতের অবদান ২২.২৬ শতাংশ।

আরও পড়ুন