সবুজ শ্যামল আমাদেরই সোনার বাংলাদেশ। ষড়ঋতুর বাংলাদেশ বিভিন্ন সময় প্রকৃতি বিভিন্নভাবে সেজে থাকে। যখন যে ঋতুতে বাংলাদেশ প্রাকৃতিকভাবে সৌন্দর্য ছড়িয়ে থাকে সেই সৌন্দর্যকে অনুভব করে থাকে মানুষ। ষড়ঋতুর একটি হলো গ্রীষ্ম ঋতু। বর্তমানে গ্রীষ্মের চলমান এই ঋতুতে ফল-ফুলের ব্যাপক সমারোহ। গ্রীষ্মের এই ঋতুতে প্রকৃতির নজরকাড়া আরেক সৌন্দর্য জারুল ফুল। বাংলাদেশের গ্রামের রাস্তাঘাট ঝোপজঙ্গল সহ কমবেশী সবখানে দেখা যায় জারুল ফুলের বিশাল সমারোহ।
রাস্তাঘাটে চলাফেরা করার সময় যেকোনো পথচারী এ ফুল দেখতে থমকে দাঁড়ায় এ ফুলের ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। গ্রীষ্মের এ খরতাপের মধ্যেই বাংলার প্রকৃতিতে দেখা যায় নানা প্রকার ফুলের সমারোহ। বিভিন্ন জাতের অনেক ফুলের মধ্যে মানুষের নজর কাড়ছে বেগুনি রঙের থোকা থোকা জারুল ফুল। পাপড়ির নমনীয় কোমলতা, দৃষ্টিনন্দন বর্ণচ্ছটা নিয়ে প্রকৃতিকে যেন আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছে এ জারুল ফুল। এমন অনিন্দ্যসুন্দর মনকাড়া দৃশ্য কতই না চমৎকার!
সবুজ প্রকৃতির মধ্যে রোদ ঝলমলে জারুল গাছগুলোয় শোভা পাচ্ছে গাঢ় বেগুনি রঙের ফুল। চলার পথে পথিক থমকে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছেন জারুল ফুলের বেগুনি রঙের আভা। থোকা থোকা ফুলগুলোও যেন চোখ ধাঁধিয়ে পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। বাংলার সবুজ শ্যামল গ্রামীন পরিবেশের বিভিন্ন জায়গা দেখা যায় জারুল গাছের প্রস্ফুটিত জারুল ফুল।
জারুল ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলি মানুষকে বিমুগ্ধ করছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন ঝোপ জঙ্গল ও রাস্তার ধারে জারুল গাছে বেগুনি রঙের ফুল যেন ফুলের বন্যা।পথের ধারে জারুল ফুলের সৌন্দর্য দেখে মনটাও প্রাণবন্ত হয়ে যায় ।
গ্রীষ্মের শুরুতে জারুলের উজ্জ্বল প্রস্ফুটনে চারিদিকে উচ্ছলতার বিকিরণ সব সৌন্দর্য-পিপাসু মানব মনকে মুগ্ধ করে রাখে। এ যেন গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে এক টুকরো রঙিন হিমেল হাওয়া। কবি জীবনানন্দ দাশের কাব্যে গ্রীষ্মের খরতাপের একটু প্রশান্তিতে বেগুনি আভার জারুল ফুলের সরব উপস্থিতি লক্ষণীয়।
রূপময়ী জারুলের প্রতি কবি জীবনানন্দ দাশ তো সাহিত্যের এক মহিমান্বিত রসদ জ্ঞান করছেন। জারুল ফুল আর ফলের বিপুল সমাহার গ্রীষ্মে প্রকৃতিকে দিয়েছে অনন্য মনোরম মর্যাদা। পাশাপাশি রসালো আম, জাম, কাঁঠাল ও ফলফলাদির সঙ্গে ফুলের মাধ্যমে প্রতি বছর নয়নাভিরাম অস্তিত্বের জানান দেয়। জারুল ফুল এ মৌসুমেরই অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ফুল। গরমের মাত্রা যতই বাড়ছে জারুল ফোটার তীব্রতা ততই বাড়ছে। তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে জারুলের মুগ্ধতা কমতে থাকে।
গ্রামবাংলায় জারুল গাছ একটি অতি পরিচিত নাম। প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখতে জারুল ফুলের কোনো জুড়ি নেই। জারুল সাধারণত জমির আইলে, রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় এমনিতেই জন্মায়। পাপড়ির নমনীয় কোমলতায় দৃষ্টিনন্দন বর্ণচ্ছটা নিয়ে প্রকৃতিকে আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে জারুল ফুল। পাতাঝরা বড় আকারের বৃক্ষ। বাকল মসৃণ ও রং ধূসর বা পিতাভ ধূসর। ফুল বেগুনি। কাঠ শক্ত মসৃণ ও টেকসই। সহজে কাজ করা যায়। পানির নিচেও ব্যবহার করা যায়। গাছের উচ্চতা ৮০ থেকে ১০০ ফুট বা তদূর্ধ্ব। উদ্ভিদ বিজ্ঞান অনুযায়ীজারুল ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম (Lagerstroemia speciosa) লেজারস্ট্রমিয়া স্পেসিওসা এবং ইংরেজি নাম (Giant Crape-myrtle) জায়ান্ত ক্রেপ মার্টেল।
গাছের শাখা-প্রশাখা ও কাণ্ড শক্ত, শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে দণ্ড-বোঁটায় অসংখ্য ফুল ফোটে। বোঁটার নীচ থেকে প্রথম ফুল ফোটা শুরু হয়ে বোঁটার সামনের দিকে ধীরে ধীরে ফুল ফোটে। ফুলে পাপড়ি ছয়টি, ফুলের মাঝখানে হলুদ রঙের পরাগ রয়েছে। ফুল শেষে গাছে বীজ হয়। বীজ দেখতে গোলাকার। জারুল বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। বাংলাদেশে সাধারণত নীলাভ ও গোলাপি এই দুই রঙের জারুল ফুল দেখা যায়।
উদ্ভীদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, জারুলের আদি নিবাস শ্রীলঙ্কায় হলেও এটি ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষ। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে জারুল গাছের দেখা মেলে।
জারুল ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি উদ্ভিদ। জ্বর, অনিদ্রা, কাশি ও অজীর্ণতায় জারুল খুবই উপকারী। বাতের ব্যাথায় জারুল গাছের পাতা বেটে প্রলেপ দেয়া হয়। শিকড় সিদ্ধ করা পানি মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কাশি ভালো হয়। ডায়বেটিস রোগেও এর বীজ, ছাল ও পাতা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
লেখক - সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC