দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য এক উজ্জ্বল ক্ষেত্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানির মতো উন্নত দেশগুলোর ৩০টি বিদেশি, ৭টি যৌথ এবং ১১টি দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত উৎপাদন ও রপ্তানির হাত ধরে এই ইপিজেড এখন সাফল্যের নতুন দিগন্তে।
এখানকার উৎপাদিত পণ্যের প্রায় ৯৫ শতাংশই রপ্তানি হয় বিদেশে। সেই ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরে পণ্য রপ্তানিতে নতুন রেকর্ড গড়তে চলেছে কুমিল্লা ইপিজেড।
ইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসেই ৬৪৬ দশমিক ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা টাকার অঙ্কে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা। এই রপ্তানির পরিমাণ ইতিমধ্যেই আগের পুরো অর্থবছরের রপ্তানিকেও ছাড়িয়ে গেছে।
ইপিজেড কর্তৃপক্ষের আশা, বর্তমান স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় থাকলে এই অর্থবছর শেষে রপ্তানির পরিমাণ দশ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করবে। কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস, সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই কুমিল্লা ইপিজেড এক বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ দশ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে দেবে।
কুমিল্লা ইপিজেডের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলে ওঠার পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা দেখা দেয়। এর ফলে কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হয় এবং অনেক দেশি-বিদেশি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান পিছুপা হয়। তবে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই সেই পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। ফ্রান্স ও জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এখানকার পণ্যের চাহিদা ও রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাবে কুমিল্লা ইপিজেডে নতুন বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান দুটোই বেড়েছে।
বর্তমানে এই ইপিজেডের ৪৮টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মরত আছেন, যাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই নারী। এখানে তৈরি হচ্ছে গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ, সোয়েটার, ইলেকট্রনিক্স পার্টস, জুতা, সেফটি জ্যাকেটের মতো বিভিন্ন পণ্য।
তবে, ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য পর্যাপ্ত প্লটের অভাব দেখা দিয়েছে। এর ফলে অনেক বিনিয়োগকারী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আশেপাশে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই ব্যবসায়ী নেতারা এই অঞ্চলের সম্প্রসারণ এবং নতুন প্লট বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি জামাল আহমেদ বলেন, "আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতিতে অবিচল ছিলাম। এখানে যারা ব্যবসা করছেন, তারা তাদের প্রাপ্য সহযোগিতা পেয়েছেন।"
সবমিলিয়ে, কুমিল্লা ইপিজেড বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। তবে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করতে ইপিজেডের সম্প্রসারণ এখন সময়ের দাবি।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC