ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আনাস আল-শরিফসহ আলজাজিরার ৫ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আলজাজিরার এক প্রতিবেদন মতে, রবিবার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যায় আল শিফা হাসপাতালের প্রধান ফটকের বাইরে অবস্থিত তাঁবু লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এতে আলজাজিরার পাঁচ সাংবাদিকসহ মোট সাতজন নিহত হন।
আলজাজিরার নিহত সাংবাদিকরা হলেন আনাস আলশরিফ (২৮), সংবাদদাতা মোহাম্মদ ক্রিকেহ, ক্যামেরা অপারেটর ইব্রাহিম জাহের, মোহাম্মদ নওফাল ও মোমেন আলিওয়া।
সোমবার (১১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। তারা সবাই হাসপাতালে অবস্থানরত সাংবাদিকদের জন্য নির্ধারিত তাঁবুর ভেতরে ছিলেন।
আলজাজিরা এক বিবৃতিতে এ ঘটনাকে ‘সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপর পরিকল্পিত ও প্রকাশ্য হামলা’ এবং ‘লক্ষ্যবস্তু হত্যা’ বলে অভিহিত করেছে।
হামলার কিছুক্ষণ পরেই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানায়, তারা আল-শরীফকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, কারণ তিনি হামাসের একটি সশস্ত্র সেলের প্রধান বলে দাবি করা হয়। তবে নিহত বাকি ৪ সাংবাদিকের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি আইডিএফ।
আলজাজিরার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোহাম্মদ মোয়াওয়াদ বিবিসিকে বলেন, আল-শরীফ অনুমোদিত সাংবাদিক ছিলেন এবং গাজা উপত্যকায় কী ঘটছে বিশ্বকে তা জানানোর জন্য তিনি শক্তিশালী কণ্ঠ ছিলেন। তারা ফ্রন্টলাইনে ছিলেন না- সাংবাদিকদের তাঁবুতেই ছিলেন।
মোয়াওয়াদ আরো বলেন, আসলে ইসরায়েলি সরকার গাজার ভেতর থেকে রিপোর্টিং করা যেকোনো চ্যানেলের কভারেজ বন্ধ করতে চাইছে। এটি এমন কিছু যা আমি আধুনিক ইতিহাসে আগে কখনও দেখিনি।
২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের গাজায় স্বাধীনভাবে রিপোর্ট করার অনুমতি দেয়নি। তাই, অনেক সংবাদমাধ্যম কভারেজের জন্য স্থানীয় সাংবাদিকদের ওপর নির্ভর করে।
আইডিএফ দাবি করেছে, আল-শরীফ সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে রকেট হামলায় যুক্ত ছিলেন এবং তার সামরিক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণস্বরূপ পূর্বে গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল। আইডিএফ আরো জানায়, হামলার আগে তারা বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নির্ভুল অস্ত্র, আকাশ থেকে নজরদারি এবং অতিরিক্ত গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করেছে।
গত মাসেই আল জাজিরা, জাতিসংঘ এবং কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) আল-শরীফের সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছিল।
সিপিজের প্রধান নির্বাহী জোডি গিন্সবার্গ বিবিসিকে বলেন, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাদের হত্যা করা সাংবাদিকদের সন্ত্রাসী বলে প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, এটি এমন একটি নমুনা যা আমরা ইসরায়েলে দেখেছি- কেবল বর্তমান যুদ্ধে নয়, পূর্ববর্তী দশকগুলোতে- যেখানে সাধারণত একজন সাংবাদিককে ইসরায়েলি বাহিনী হত্যা করে এবং তারপর ইসরায়েল বলবে যে তারা সন্ত্রাসী, তবে সেই দাবির সমর্থনে খুব কম প্রমাণ সরবরাহ করে।
সিপিজের হিসাবে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত ১৮৬ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
নিহত হওয়ার আগে যা লিখে গেছেন আল-জাজিরার সাংবাদিক শরীফ:
নিহত পাঁচ সাংবাদিকের একজন, আল-জাজিরার সংবাদদাতা আনাস আল-শরীফ (২৮), মৃত্যুর আগে নিজের ‘শেষ বার্তা’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিয়ে গেছেন।
তিনি গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন করছিলেন।
নিহত হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই এক্সে (সাবেক টুইটার) শরীফ লিখেছিলেন, গাজা সিটির পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে তীব্র ও লক্ষ্যকেন্দ্রিক বোমাবর্ষণ শুরু করেছে ইসরায়েল। এ ধরনের বোমাবর্ষণ ‘ফায়ার বেল্ট’ নামে পরিচিত।
শরীফের শেষ ভিডিওটি রাতের বেলা ধারণ করা। ভিডিওতে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্র আওয়াজ শোনা যায়। হামলার পর মুহূর্তে কমলা আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে গাজার রাতের আকাশ।
গত ৬ এপ্রিল শরীফ একটি ‘শেষ বার্তা’ লেখেন। মৃত্যুর পর প্রকাশের জন্য এই বার্তা রেখে গিয়েছিলেন তিনি।
বার্তায় শরীফ লিখেছিলেন, তিনি যন্ত্রণার প্রতিটি ক্ষুদ্রতম রূপ অনুভব করেছেন। বারবার দুঃখ ও ক্ষতির স্বাদ পেয়েছেন।
সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC