মা মা মা আহা মা শব্দটিকে কি বিশেষণে বিশেষায়িত করব আমার জানা নেই। মা কে নিয়ে লিখার কোন ভাষা খুজে পাইনা। লিখলে পৃষ্ঠা শেষ হবেনা। কলম থামবেনা।
মায়ের বিয়ে হয় মাত্র তের বছর বয়সে। নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া সেই ছোট্ট মেয়েটি ঘর সংসারের হাল ধরে। ৫১বর্তী পরিবার চারটি খানি কথা নয়। ঘরের বড় বউ ছিল। একটা সময় শ্বশুর আর স্বামীর সাপোর্টে লিখা পড়া শুরু করে। এর পর বড় ভাইয়ের হাত ধরে রাজনীতিতে যুক্ত হন। কিন্তু কি জানেন?ত্যাগ স্বীকার। সন্তান লালন পালনের জন্য রাজনীতি ছেড়ে দেয়। কোন রকম
পড়াশোনাটা শেষ করে।গ্রাম থেকে শহরে চলে আসে আব্বার চাকরির সুবাদে। একে একে জন্ম হয় আমরা ছয় ভাই বোনের। আমি যখন বড় হই তখন ধীরে ধীরে বুঝতে পারি পৃথিবীতে মা কি, মায়ের চেয়ে বিকল্প কিছু নেই। মমতার সাগর মা।
মা খুব অল্প বয়স থেকেই ডাইবেটিস- প্রেসারে ভুগত। আমি খুব চিন্তায় থাকতাম। এই ভালো ত এই খারাপ। ২০১০ সালে হজ করার পর মা কয়েক বছর সুস্থ ছিল।কিন্তু ২০১৭ সালে সব শেষ। খুব সংক্ষিপ্ত ভাবেই তার শেষ যাত্রা সমাপ্ত করছি।লিখার সময় খুব কান্না পাচ্ছে। ল্যাপটপের বাটন চাপতেও বুক দুরু দুরু করছে। হাত চলছেই না।
আমার উৎকণ্ঠা মাকে হারানোর ভয়ে দিন দিন বাড়তে থাকে।মা অসুস্থ হলে বুকে কাঁপুনি ধরে। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনায় বসে যায়। আলাহ কবুলও করেন কিন্তু এইবার----।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখ আমি ঢাকা বই মেলা থেকে এসেই শুনতে পাই মা বিছানা থেকে পরে গিয়ে হাত ভেঙ্গে ফেলে। চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু উনি এর পরের দিন আবারও পরে গিয়ে কোমড় ভেঙ্গে ফেলে। এর পর কতটা ভয়ঙ্কর রাত আর দিন গেছে বলে বোঝানো যাবে না। আমরা দুই, বোনের কান্না শুধু আল্লাহ দেখেছেন। মা প্যারালাইসড প্রায়।
বিছানা থেকে উঠতেই পারে না।মায়ের হাত কোন ভাবে ভালো হয়না।মা হাতে ব্যান্ডেজ পরতে চায় না। খুলে ফেলে দেয় “ আঞ্চলিক ভাষায় বলে আত্তে গম ন লাগের , অফুত আর ফটটি খুলি দে, আর আত খুলি দে”। মাকে বোঝাই না হয় হাত ভালো হবে না তোমার। মাকে আমরা প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করায় তাদের ভাষ্য হাতে রড ডূকিয়ে দিবে উনার হাত ভালো হবে কিন্তু আমরা এই রিস্ক নেয়নি কারণ মায়ের ডাইবেটিস আছে। আমরা আরেক হাসপাতালে ডাক্তার হুমায়ূন কবীরের কাছে নিয়ে যাই।খুব ভালো একজন ডাক্তার ছিলেন তিনি।
এর পর উনার ট্রিটমেন্ট চলতে থাকে। কিন্তু এরই মাঝে খোঁজ পাই এক স্বপ্নে পাওয়া ওষুধের কথা। অনেকে এই হাল ফ্যাশনের যুগে আমার এই ওষুধের কথা শুনলে আঁতকে উঠবেন। আর একজন লেখক হয়ে আমি কি বলি এসব অনেক প্রগতিশীলরা হাসবেন।ঠাট্টা করবেন। আসলে কি জানেন প্রিয় মানুষ যখন অসুস্থ হয় তখন চোখে মানুষ পথ দেখেনা। যুগ দেখে না । কি মডার্ন কি গাইয়্যা এসব দেখে না। দেখে তার ভালো হওয়া আর সেতো মা, মা, মা। তাই কোন কিছুতেই ছাড় নেই।
শেষ পর্যন্ত ডাক্তারের ট্রিটমেন্ট আর স্বপ্নের ওষুধ এ ভরসা করি আমরা। দু,বোনের দিন রাত পর্যাপ্ত সেবা চলে গোসল থেকে শুরু করে পায়খানা প্রস্রাব পর্যন্ত ।কোন নার্স কে মাকে ছুতেও দেয়নি । কারণ তারা মায়ের কন্ডিশন বুঝতেন না। অবশেষে এভাবেই মা দীর্ঘ চারমাস পর সুস্থ। একদম স্বাভাবিক চলাফেরা শুরু। মায়ের ঠিক হওয়ার খুশিতে যেন ভাই বোনরা দোয়া করাই বন্ধ করে দিলাম।
একদিন সারদিন মা প্রতিদিনের মতো সকালে উঠে রান্না- বান্না সেরে ছোট ভাইকে দিয়ে ওষুধ আর ডাব এনে রাখল। নামাজ শেষ করে সবাইকে চা- নাস্ততা করিয়ে নিজে চা পান করে মাগরিবের আজান শেষে নিজের খাটে বসেন। হুট করে কারেন্ট চলে যায়। মা বলেন, “ওরে আমার গরম লাগছে দরজা খুলে দে দরজা খুলে দে”। দুবার বলতেই মা ছোটবোনের কাধে মাথা ফেলে দেয়।সবাই আতঙ্কে ছোটাছোটি ।মাকে তাড়াতাড়ি হাস্পাতালে নিয়ে গেল। কিন্তু মা ওরে মা মারে মা ত আর নেই। মা সবাইকে ছেঁড়ে চলে গেছে। উহঃ ছুটে গিয়ে ডাক্তারকে বললাম ডাক্তার আমার মাকে আবার চেক করুন মায়ের বুকে অক্সিজেন দিন দেখবেন ভালো হয়ে যাবে। আপনি বুঝতেছেন না আমার মা সুস্থ।একদম সুস্থ। দেখুন একবার ওরে আল্লাহ।মাটিতে গড়াগড়ি আমার। আকাশ বাতাস এক হয়ে কাঁদছে যেন আমার সাথে।
অবশেষে ২০১৭ সালের ৩ আগস্ট মা চলে যায় পরপারে। রেখে যায় বিষাদময় পৃথিবী। করে যায় একা একদম একা। আমরা চারদিন পর মায়ের রান্না করা শেষ তরকারী খেয়েছি আর অশ্রু ঝরিয়েছি।
এই রান্নার সাধ আর কোনদিন পাবনা। মা ডেকে ডেকে আমাদের আর খাওয়াবেনা।আহা ফোনে আর মায়ের নাম্বার থেকে রিং আসবে না। বিরক্ত হয়ে সন্তানদের বলতে হবে না আহা এত ঘন ঘন কল করছ কেন? আহা মা আহা মারে তুমি ছাড়া কত নিষ্ঠুর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি। তবুও বেঁচে থাকা শিখে গেছি। অজানার এক পরপারে দোয়া ছাড়া আর কিছুই দেওয়ার নাই তোমায়।
কষ্ট আর তোমার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে আছি। যে কষ্টটা সব কষ্টের উর্ধ্বে। এই কষ্টে শুধু দীর্ঘশ্বাস আছে, আছে নীরব নিথর স্মৃতি। যা বয়ে বেড়াতে হবে মৃত্য পর্যন্ত।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC