বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে দক্ষিণবঙ্গ অচল করে দেওয়ার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।
রবিবার (৪ মে) দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে উক্ত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের যেই প্রত্যাশা ছিল, সেই প্রত্যাশা পূরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্র কোনো আগ্রহ দেখায়নি। আমরা সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই, আমাদের বর্তমান যেই উপাচার্য, শিক্ষার্থীরা অনেক ছোট ছোট ইস্যু নিয়ে তাঁর কাছে গিয়েছে, কিন্তু তিনি আশানুরূপ কোনো সমাধান দিতে পারেননি।
অবশেষে ২২ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা যখন তাঁর পদত্যাগের দাবি তুলে আন্দোলন শুরু করে, সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে উপাচার্য বলেন তিনি শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নেবেন। কিন্তু পরবর্তীতে অর্ধবছর পার হয়ে গেলেও তিনি শিক্ষার্থীদের কোন কোন দাবি পূরণ করতে পেরেছেন বা পারেননি, সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি। অথচ তিনি নিজেই বলেছিলেন, যদি তিনি ২২ দফা পূরণে ব্যর্থ হন, তাহলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারাবেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, এই ব্যাপারটা নিয়ে তিনি আর কোনো আলাপ করেননি।
গত ১৮ দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। শিক্ষার্থীদের যেসব দাবি ছিল, সেগুলো নিয়ে দফায় দফায় আলোচনার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও একবারের জন্যও শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগের কোনো উদ্যোগ আমরা লক্ষ্য করিনি। আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশে এমন স্বৈরাচারী মনোভাবের মানুষকে আমরা চাই না। আমরা চাই না শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হোক বা দক্ষিণবঙ্গের কোনো ক্ষতি হোক।
আবারও আমরা বলতে চাই, ৫ই আগস্ট নতুন বাংলাদেশের যেই পদযাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই যাত্রায় আমরা একটি স্বপ্ন দেখেছিলাম—বিশ্ববিদ্যালয়ের যত দুর্বলতা আছে, আস্তে আস্তে সব কাটিয়ে উঠতে পারব। কিন্তু আমরা দেখলাম, ফ্যাসিস্ট কায়দায় সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা ফ্যাসিস্টদের দোসর ছিল, তাদের তিনি পুরস্কৃত করেছেন এবং যারা ছাত্রদের পক্ষে আন্দোলনে ছিলেন, তাদের শাস্তির মুখোমুখি করেছেন।
আমরা দেখছি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে চলছে, এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটি বিদ্যাপীঠ চলতে পারে না। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
সর্বশেষ যখন ৪ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে, তখনও শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করা বা কথা বলার ন্যূনতম প্রয়োজনবোধ তিনি মনে করেননি। আমরা নানা সময়ে দেখেছি, শুধু একটি সিগনেচারের অভাবে অনেক কাজ ঝুলে থাকে। আপনারা দেখেছেন, আমাদের একজন শিক্ষার্থী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের একটি সিগনেচারের অভাবে সেই শিক্ষার্থী আর্থিক সহায়তা পায়নি।
এই উপাচার্যকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার আর চায় না। আমরা শিক্ষার্থীদের এটাও বলতে চাই, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে চাই না। আমরা চাই না ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হোক।
যদি দ্রুত আমাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হয়, তাহলে সেটাই শিক্ষার্থীদের এবং এই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য মঙ্গলজনক হবে। তাই আমরা ইউজিসিকে বলতে চাই আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হোক। আমাদের দাবি যদি মেনে না নেওয়া হয়, তাহলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউনসহ গোটা দক্ষিণবঙ্গকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে বাধ্য হব।
সংবাদ সম্মেলনের পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগ চেয়ে মিছিল করে। মিছিলটি পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পদক্ষিণ করে আবার গ্রাউন্ড ফ্লোরে ফিরে আসে। মিছিলে শিক্ষার্থীরা "এক দফা এক দাবি, ভিসি তুই কবে যাবি", "এক দুই তিন চার, ভিসি তুই গদি ছাড়" ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
এর আগে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভা করা হয়েছে। আমি শিক্ষার্থীদের সাথে বর্তমান পরিস্থিতি ও দাবি-দাওয়া নিয়ে বসতে চাই।
এসময় তিনি আরও জানান, ‘মুচলেকা দিলে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা মামলা ও সাধারণ ডায়েরি থেকে মুক্তি পাবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা।’
তবে উপাচার্যের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে জুলাই আন্দোলনে অন্যতম সমন্বয়ক ও বরিশাল মহানগরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, গত তিন সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীরা ন্যায্য দাবি নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। উপাচার্য চাইলে বহুবার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসতে পারতেন, আলোচনার দরজা খুলে দিতে পারতেন কিন্তু তিনি একবারও সে চেষ্টাটুকুও করেননি। তাঁর এখন অন্তিম পর্ব। আমরা তাঁর সাথে কোনো আলোচনায় যাচ্ছি না। আমরা শুধু বলতে চাই আপনি বাস্তবতা মেনে নিন।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC