মে ৯, ২০২৫

শুক্রবার ৯ মে, ২০২৫

ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ: ভুল পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হতে পারে

ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ: ভুল পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হতে পারে
ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ: ভুল পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হতে পারে/ছবি: এআই

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যদি কোনো প্রকার সামরিক সংঘাতের সূত্রপাত হয়, তবে বাংলাদেশের প্রতিটি পদক্ষেপ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে গ্রহণ করা অপরিহার্য। সামান্যতম ভুল সিদ্ধান্তও দেশের জন্য সুদূরপ্রসারী ও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক ভারসাম্য এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মতো একাধিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।

বাংলাদেশ এমন এক কৌশলগত অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে উভয় প্রতিপক্ষই নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য দেশটির ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে।

এমতাবস্থায়, কোনো একটি নির্দিষ্ট পক্ষকে সমর্থন জানালে আঞ্চলিকভাবে বাংলাদেশ একা হয়ে যেতে পারে। এর ফলস্বরূপ, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অঙ্গনেও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিতে পারে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বৃদ্ধির মতো ঘটনা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, অপরিণামদর্শী কোনো পদক্ষেপ নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বাংলাদেশের জন্য পরিস্থিতি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। যুদ্ধাবস্থা তৈরি হলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেবে।

বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন এবং চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভুল সিদ্ধান্ত নিলে আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা থেকেও বাংলাদেশ বঞ্চিত হতে পারে।

ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। কোনো একটি দেশের পক্ষ নিলে অন্য দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি। আন্তর্জাতিক মহলেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়াও, যুদ্ধাবস্থার কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর আগমন ঘটতে পারে। এতে দেশের সীমিত সম্পদের ওপর চরম চাপ সৃষ্টি হবে এবং শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনা একটি বড় ধরনের মানবিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

সুতরাং, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যেকোনো প্রকার সংঘাতের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। নিজস্ব জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সামান্যতম ভুল সিদ্ধান্তও বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হতে পারে, যা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করবে।

 

মোঃ আল-আমিন
ব্যাংকার, এমবিএ (হিসাব বিজ্ঞান)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও পড়ুন