মে ১৬, ২০২৫

শুক্রবার ১৬ মে, ২০২৫

ভাইরাল ফটোকার্ডে শেখ হাসিনার মৃত্যু ভুয়া দাবি: ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ভাইরাল ফটোকার্ডে শেখ হাসিনার মৃত্যু ভুয়া দাবি: ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
ভাইরাল ফটোকার্ডে শেখ হাসিনার মৃত্যু ভুয়া দাবি: ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান/ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ফটোকার্ড ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার খবরে দলনেত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নয়াদিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। যমুনা টিভির আদলে তৈরি এই ফটোকার্ডে শেখ হাসিনার একটি হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকার ছবি ব্যবহার করা হয়। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই তথ্য ও ছবি — উভয়ই বিভ্রান্তিকর এবং বিকৃত।

ফটোকার্ডের উৎস যাচাই

ভাইরাল ফটোকার্ডটির প্রকাশের তারিখ হিসেবে ১৩ মে ২০২৫ উল্লেখ থাকলেও যমুনা টিভির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে এমন কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ডের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ফলে, এটি যমুনা টিভির তৈরি নয় বলেই প্রমাণিত হয়েছে।

ছবির আসল উৎস

ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবির সত্যতা যাচাই করতে ফ্যাক্টওয়াচ রিভার্স ইমেজ সার্চের সহায়তা নেয়। এতে দেখা যায়, ছবিটি ২০২৫ সালের ৮ মার্চ ফার্স্টপোস্ট নামের একটি ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ব্যবহৃত হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, এটি শেখ হাসিনার ছবি নয় বরং একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ভারতীয় নারীর ছবি, যাকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।

এই নারীর মুখে এডিট করে শেখ হাসিনার মুখ বসানো হয়েছে। মূল ছবির নারী হলেন ৮২ বছর বয়সী রাজ পাসরিচা, যিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনা কর্মকর্তার বিধবা স্ত্রী।

ঘটনার পেছনের সত্য

রাজ পাসরিচা ৪ মার্চ এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে বেঙ্গালুরু যাওয়ার পথে দিল্লি বিমানবন্দরে অবহেলার শিকার হন। পরিবারের পক্ষ থেকে হুইলচেয়ার আগেই বুক করা হলেও, বিমানবন্দরে পৌঁছে তা সরবরাহ না করায় তাকে দীর্ঘ পথ হেঁটে যেতে হয়। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাকে বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করতে হয়।

এ ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে এবং হিন্দুস্তান টাইমস, এনডিটিভি, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ইকোনমিক টাইমসসহ ভারতীয় মূলধারার গণমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হয়।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশ সরকার ১২ মে ২০২৫ একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। তবে রাজ পাসরিচার অসুস্থতার ঘটনা ঘটেছে তার অনেক আগেই।

উপস্থাপিত তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ নিশ্চিত করেছে, ভাইরাল হওয়া ফটোকার্ডটি ভুয়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তৈরি। এতে ভিন্ন এক নারীর ছবি বিকৃত করে শেখ হাসিনার মুখ সংযুক্ত করা হয়েছে এবং একটি ভুল বার্তা ছড়ানো হয়েছে। তদুপরি, শেখ হাসিনার মৃত্যুর বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য মূলধারার সংবাদমাধ্যমে কোনো তথ্য নেই।

সুতরাং, ভাইরাল ফটোকার্ডটি একটি সম্পূর্ণ বিকৃত ও বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট — যার কোনো ভিত্তি নেই।

আরও পড়ুন