নভেম্বর ২৩, ২০২৪

শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

বেরোবির কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুলি করতে প্ররোচনার অভিযোগ

Rising Cumilla - Allegation of incitement to fire against Berobi officer
ছবি: প্রতিনিধি

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দিকে গুলি ছুঁড়তে পুলিশকে উৎসাহিত করার অভিযোগ উঠেছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা মো. রাফিউল হাসানের (রাসেল) বিরুদ্ধে। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।

গত ১৬ জুলাই ঘটনার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে থাকা একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, সেদিন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা রংপুর শহর হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেটে অবস্থান নিলে সেখানে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল রাবার বুলেট ছুড়ে। এ সময় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ। এতে এক পর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আবু সাঈদ। এসময় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায় একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের একজন সাংবাদিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সেকশন অফিসার মো. রাফিউল হাসানকে জিজ্ঞেস করছেন—‘আপনি কী পুলিশ? আপনি গুলি মারতে বললেন কেন?’

জবাবে ওই কর্মকর্তা পিছু হটতে হটতে ভীত চেহারায় বলেন, ‘না আমি পুলিশ নই; আমি বলিনি।’

এ ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এই কর্মকর্তাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি করেন তারা।

এইদিকে পুলিশ-ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে বেরোবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে দেখা যায়। তাদের সেই সময়কার ছবি বিভিন্ন ভিডিওতে জুড়ে দিয়ে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ রয়েছে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধানের বিরুদ্ধে।

বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সেই সাংবাদিক শাহরিয়ার মিম বলেন, রাসেল শুধু গুলি মার মার করছিল। ঐটা আমি শুনে দূর থেকে এগিয়ে এসে বলছিলাম আপনি কি পুলিশ?
এছাড়া কোন শিক্ষককে গুলি বা মারামারির কথা বলতে শুনিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সেকশন অফিসার মো. রাফিউল হাসানের কাছে পুলিশকে গুলি চালাতে বলেছেন কিনা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি গুলি চালাতে বলিনি।’

সংঘর্ষের সময় হেলমেড পরিহিত স্টিল ছবির ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ বলেন, প্রক্টর স্যারের অনুরোধে আমি ঘটনাস্থলে যাই। সংঘর্ষ চলাকালীন চারদিক থেকে ইটপাটকেল টিয়ারশেল সহ অন্যান্য বিপদজনক জিনিসপত্র আসতে থাকে।

তখন নিজের নিরাপত্তার জন্য আমার বাইকে থাকা হেলমেটটি পরিধান করি। তারপরে সেখানে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অনেক শিক্ষার্থী, সাংবাদিককে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে পাঠাতে সাহায্য করি। পুলিশ এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করি যেন কোন সহিংস ঘটনা না ঘটে। অনেক সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত ছিলো, যারা ১ নং গেটের আনসার বক্সে অবস্থান করছিলো। আমি যদি শিক্ষার্থীদের ক্ষতির উদ্দেশ্য নিয়েই সেখানে অবস্থান করতাম তাহলে তো তারা দেখতো, বলতো। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়  একটি সুযোগ সন্ধানী গ্রুপের ইন্ধনে আমাকে হেয় করা হচ্ছে। মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, যা একজন শিক্ষক হিসেবে আমার জন্য বিব্রতকর।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। নিহত আবু সাঈদের বাড়ি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায়। আবু সাঈদ ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়টির কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।