এপ্রিল ১৬, ২০২৫

বুধবার ১৬ এপ্রিল, ২০২৫

বিলুপ্তির ১৩ হাজার বছর পর ডায়ার ওলফের ‘পুনর্জন্ম’ ঘটালেন বিজ্ঞানীরা

Rising Cumilla - dire wolf
ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘গেম অব থ্রোনস’-এর দর্শকদের মনে নিশ্চয়ই ভেসে ওঠে বিশাল আকারের সাদা নেকড়ে ডায়ার ওলফের ছবি। এবার সেই কল্পনার জগৎ যেন বাস্তবে ধরা দিল! ডালাসভিত্তিক বায়োটেক কোম্পানি কোলসাল বায়োসায়েন্সেস বিশ্বে প্রথমবার কোনো বিলুপ্ত প্রাণীকে সফলভাবে ফিরিয়ে আনার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘ ১২,৫০০ বছর আগে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়া ডায়ার উলফকে অত্যাধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে।

কোলসালের বিজ্ঞানীরা প্রাচীন ডিএনএ, ক্লোনিং এবং জিন-সম্পাদনা প্রযুক্তির সমন্বয়ে ধূসর নেকড়ের জিনে পরিবর্তন এনে এই শক্তিশালী শিকারী প্রাণীর একটি সংকর প্রজাতি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

একসময় উত্তর আমেরিকার শীর্ষ শিকারী ছিল এই ডায়ার ওলফ। এর বিশাল আকার, শক্তিশালী চোয়াল এবং ঘন পশম এটিকে অনন্য করে তুলেছিল। ‘গেম অফ থ্রোনস’-এর পর্দায় এটি ছিল ক্ষমতা ও প্রভুত্বের প্রতীক, যা দর্শকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল। কোলসাল বায়োসায়েন্সেস জানিয়েছে, তারা ১৩,০০০ বছর পুরনো একটি দাঁত এবং ৭২,০০০ বছর পুরনো একটি খুলি থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে সফলভাবে ডায়ার উলফের তিনটি শাবক জন্ম দিতে পেরেছে।

এই অভাবনীয় সাফল্য কেবল কোলসাল বায়োসায়েন্সেসের জন্যই একটি বিশাল মাইলফলক নয়, বরং এটি সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে আধুনিক জিন-সম্পাদনা এবং ক্লোনিং প্রযুক্তির সাহায্যে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিদেরও ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এর আগে কোলসাল প্রাথমিকভাবে ম্যামথ, ডোডো পাখি এবং তাসমানিয়ান বাঘের পুনরুজ্জীবনের কাজ শুরু করলেও, ডায়ার উলফ ছিল তাদের প্রথম সফল বাস্তবায়ন।

বর্তমানে এই ডায়ার ওলফের শাবকগুলোকে অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘেরা একটি সুরক্ষিত পরিবেশে রাখা হয়েছে। ড্রোন এবং লাইভ ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক তাদের উপর নজরদারি করা হচ্ছে। কোলসাল জানিয়েছে, এই বিশেষ তত্ত্বাবধান কেন্দ্রটি আমেরিকান হিউম্যান সোসাইটি কর্তৃক স্বীকৃত এবং ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার দ্বারা নিবন্ধিত।

কোলসালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বেন ল্যাম এই প্রসঙ্গে বলেন, “এই অর্জন শুধু আমাদের প্রযুক্তির সাফল্যই নয়, বরং এটি ভবিষ্যতে আরও অনেক বিলুপ্ত প্রাণীকে ফিরিয়ে আনার পথ খুলে দিয়েছে।”

ডায়ার ওলফের পুনর্জন্মের এই ঘটনা বিজ্ঞানীমহলে এবং নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। তবে নিঃসন্দেহে এটি জীববিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ইতিহাসে এক নতুন সম্ভাবনার সূচনা করল।