মে ২১, ২০২৫

বুধবার ২১ মে, ২০২৫

বিলুপ্তির পথে সরাইলের গ্রে হাউন্ড, সংরক্ষণের দাবি

ছবি: প্রতিনিধি

একসময় দেশের নিরাপত্তা ও শিকার কাজে অপরিহার্য ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী গ্রে হাউন্ড কুকুর। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে এই বিশেষ জাতের কুকুরটি। বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবারে সীমাবদ্ধ রয়েছে এর অস্তিত্ব। সচেতন মহল দীর্ঘদিন ধরে এর সংরক্ষণের দাবি জানালেও প্রশাসনিক উদ্যোগের অভাবে এটি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সরাইলের গ্রে হাউন্ডের উৎপত্তি নিয়ে রয়েছে নানা জনশ্রুতি। প্রচলিত এক কাহিনির মতে, প্রায় ২০০ বছর আগে সরাইলের জমিদার দেওয়ান মোস্তফা আলী এক ইংরেজ নাগরিকের কাছ থেকে একটি হাতির বিনিময়ে একটি গ্রে হাউন্ড কুকুর আনেন। শিকার করতে গিয়ে কুকুরটি জঙ্গলে হারিয়ে গেলে ছয় মাস পর গর্ভবতী অবস্থায় ফিরে আসে। পরবর্তীতে তার ছানাগুলোর চেহারায় দেখা যায় ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য—যা সাধারণ কুকুরের চেয়ে অনেকটা বাঘের মতো। ধারণা করা হয়, এই ক্রস-ব্রিড থেকেই জন্ম নেয় সরাইলের নিজস্ব গ্রে হাউন্ড জাত। যদিও এর সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ভিত্তি আজও অস্পষ্ট।

এই জাতের কুকুর শুধু শিকার কিংবা নিরাপত্তা নয়, স্বাধীনতা সংগ্রামেও রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর পালিত সরাইল গ্রে হাউন্ড “ফিল্ড মার্শাল” একবার পাকিস্তানি কমান্ডোদের হামলা থেকে তাকে রক্ষা করেছিল। আহত অবস্থায় কুকুরটিকে দূরে পাঠানো হলেও, পরবর্তীতে চার বছর পর সে তার মনিবকে খুঁজে বের করে—যা আজো কিংবদন্তি হয়ে আছে।

আন্তর্জাতিক মানের এই কুকুরগুলোর পুরুষ প্রজাতির উচ্চতা হয়ে থাকে ২৫-২৮ ইঞ্চি, ওজন ২৩-৩৩ কেজি; স্ত্রী কুকুরগুলোর উচ্চতা ২৩-২৬ ইঞ্চি এবং ওজন ১৮-২৮ কেজি। প্রতি ঘণ্টায় এরা প্রায় ৫৫ কিলোমিটার গতিতে দৌড়াতে সক্ষম। গড় আয়ু ৮ থেকে ১৪ বছর। শিকারে অতুলনীয় পারদর্শিতার কারণে এই জাতটি সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং র‍্যাবের ডগ স্কোয়াডেও জায়গা করে নিয়েছিল।

বিশেষজ্ঞ এবং সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, এই জাতের কুকুর শুধুমাত্র একটি প্রাণী নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ। তাই সরকারি উদ্যোগে গবেষণা, প্রজনন ও সংরক্ষণের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ জরুরি—নইলে হারিয়ে যেতে পারে এই অমূল্য জাতীয় সম্পদ।

আরও পড়ুন