আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) শেরে বাংলা হলে তল্লাশি চালিয়ে একটি কক্ষ থেকে দু’টি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা রুমের জিনিসপত্র সব বাইরে ফেলে দেন।
মঙ্গলবার (২৮মে) বেলা ৩টায় শেরে বাংলা হলের ৪০২১ নম্বর কক্ষটিতে তল্লাশি চালায় ছাত্রলীগের আরাফাত-রিদম গ্রুপ। এসময় তারা ঐ কক্ষটি থেকে একটি জিআই পাইপ ও একটি বেসবলসহ মোট দুটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেন বলে জানা যায়।
প্রত্যাক্ষদর্শী, হলটির এক আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, বিকেল ৩টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা আরাফাত শান্তসহ আরও ৬-৭ জন ৪০২১ নাম্বার কক্ষটির দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করেন। এবং তারা ভিতরের বেডপত্রগুলো বাইরে ছুড়ে ফেলেন।
জানা যায়, কক্ষটিতে ছাত্রলীগের আরেক গ্রুপের নেতৃত্বদানকারী অমিত হাসান রক্তিম ও তার অনুসারীরা থাকতেন। গতকাল রাতে হলে রক্তিম অনুসারী কর্মী লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী প্রসেনজিৎ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুতত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মধ্য মারামারি ঘটনা ঘটে। সেই মারামারি ঘটনার সূত্র ধরেই আজকে আরাফাত রিদম ও শান্ত গ্রুপ শেরে বাংলা হলের ৪০২১ নাম্বার কক্ষটি তল্লাশি করেন।
এসময়ে তারা কক্ষ থেকে সব জিনিসপত্র বাইরে বারান্দায় ফেলো দেন ও রুমের ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র ভাংচুর করেন।
রিদম-আরাফাত বরিশালের সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর অনুসারী। এই গ্রুপের নেতৃত্বদানকারী নেতা আবুল খায়ের আরাফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। ছিনতাইসহ তাঁর নামে একাধিক মামলা রয়েছে এবং তিনি একাধিকবার জেলও খেটেছেন। এই গ্রুপের আরেক নেতা আবিদ হাসান গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী। আলসামাদ শান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
অমিত হাসান রক্তিম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। অমিত হাসান রক্তিমের পড়াশোনা শেষ হলেও তিনি ঐ কক্ষটিতে অবস্থান করতেন তাঁর অনুসারীদের নিয়ে। অভিযোগ আছে কক্ষটি তিনি অবৈধভাবে দখল করে আছেন দীর্ঘদিন থেকেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা অমিত হাসান রক্তিম বলেন, আমি মাঝে মাঝে ঐ কক্ষটিতে যেতাম। কক্ষটিতে অস্ত্র পাওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
ছাত্রলীগ কর্মী আবুল খায়ের আরাফাত বলেন, আমরা জানতে পারি ছাত্রনমধারি কিছু অছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের ৪০২১ নাম্বার কক্ষে অবস্থান করছেন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীর উপরে নির্যাতন করছেন। সেই অভিযোগ পেয়ে আজকে কক্ষটি তল্লাশি করি ও দুটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছি। এগুলো আমরা এখন হল প্রশাসনের কাছে জমা দিব।
আরেক ছাত্রলীগ কর্মী আবিদ হাসান বলেন, কতিপয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পেয়ে হলে এ কক্ষটি তল্লাশি করি ও দুটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছি। হল প্রশাসনের লাছে আমার দাবি তারা যেন এসব সন্ত্রাসীদের হল থেকে বিতাড়িত করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শের এ বাংলা হলের প্রভোস্ট ড. আব্দুল বাতেন চৌধুরী বলেন, আমি ঘটনাটি আপনার থেকেই মাত্র জানলাম। আমি এখন হলে গিয়ে বিষয়টি দেখব। হল প্রশাসন থাকতে ছাত্রলীগ কীভাবে রুমে তল্লাশি করে এমন প্রশ্নে বলেন, কোন রুমে কোন প্রকার অভিযোগ থাকলে সেটি হল প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে। কেউ নিজে থেকে এভাবে তল্লাশি করতে পারে না। এই ব্যাপারে আমি তদন্ত:পূর্বক বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নিব।
উল্লেখ্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে ছাত্রলীগের কোন কমিটি না থাকলেও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন। বিভিন্ন গ্রুপ থাকায় আধিপত্য বিস্তারে একাধিকবার মারামারি ঘটনা ঘটিয়েছে সক্রিয় গ্রুপগুলো।