ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫

বুধবার ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি, শিক্ষার্থীদের তালাবদ্ধ আন্দোলন

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি, শিক্ষার্থীদের তালাবদ্ধ আন্দোলন
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি, শিক্ষার্থীদের তালাবদ্ধ আন্দোলন। ছবি: প্রতিনিধি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) গোপনে সিন্ডিকেট সভা আহ্বানের অভিযোগসহ বেশ কিছু অভিযোগ এনে আড়াই মাসের মধ্যেই দ্বিতীয়বারের মতো ববি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের দাবি তুলে কার্যালয়ে তালা দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে বিভিন্ন সড়ক পদক্ষিন করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এসে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা বাসভবন থেকে কার্যালয়ে এসে তা তালাবদ্ধ করে দেন।

এর আগে গত ২৭ নভেম্বর স্বৈরাচারের দোসর ও বিপ্লবী চেতনা ধারণ না করার অভিযোগসহ বেশ কিছু অভিযোগ এনে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা এবং কার্যালয়ে তালাবদ্ধ করেন।

তখন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবির প্রেক্ষিতে সেগুলো পূরণে একমাসের সময় নেন তিনি। তবে শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন একমাসের স্থলে আরো অনেক বেশি সময় পার হলেও সে দাবিগুলোর বাস্তবায়ন ওনি করতে ব্যর্থ হন এবং পরবর্তীতে আরো বেশ কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করেন। এসব বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতেই পুনরায় তারা তার পদত্যাগের দাবি তোলেন।

এই বিক্ষোভ মিছিল করার সময় তারা- ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন, দালাল ভিসির বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন, এক দফা একদাবি ভিসি তুই কবে যাবি, এক দুই তিন চার ভিসি তুই গদি ছাড়, দালাল ভিসির আস্তানা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন।

এসময় তারা ছয়টি অভিযোগ উত্থাপন করেন এবং এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তারা একদফার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ভিসি যদি এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার অবস্থান পরিষ্কার না করেন তাহলে তাকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।

তাদের উত্থাপিত অভিযোগগুলো হলো- ১.মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নিয়ম বহির্ভূত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রেজিস্ট্রারকে বহাল রেখে অসাধু সুবিধা দেওয়ার জন্য পাতানো গোপন সিন্ডিকেট সভার আহ্বান।

২.২৯শে জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নৃশংস হামলায় অংশ নেওয়া নিষিদ্ধঘোষিত সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের আগাম জামিন পাওয়া ও ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ না হওয়া।

৩.নিয়মবহির্ভূত ভাবে ২জন সিন্ডিকেট সদস্যকে বাদ দিয়ে চিহ্নিত আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের নিয়ে পাতানো গোপন সিন্ডিকেটের নাটক মঞ্চস্থ করা।

৪.আইন,সংবিধানের দোহাই দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের স্বপদে বহাল রেখে মূল পদে আনার কুচক্রী পাঁয়তারা চালানো।

৫.গত ৬ মাসেও ২২ দফার কোনোরকম প্রতিফলন করতে ব্যর্থ হওয়া।

৬.ক্যাম্পাস অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের অবাধ বিচরণ, মাদক সেবন ও ভাঙচুরের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনোপ্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হওয়া।

এসময় রসায়ন বিভাগের ১৭-১৮ শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের আজকের অবস্থান এক দফা, এক দাবি—ভিসির পদত্যাগ। ভিসি সিন্ডিকেট সভা থেকে অবৈধভাবে দুইজন সিন্ডিকেট সদস্যকে ‘আওয়ামী দোসর’ বলে বাতিল করেছেন। এমন একটি কাজ ভিসি করেছেন বা করতে যাচ্ছেন, যা আমরা মেনে নিতে পারছি না।”

তিনি আরও বলেন, “কয়েকদিন আগে আপনারা দেখেছেন, ভিসি-বিরোধী একটি আন্দোলন হয়েছিল। সেখানে কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছিল। ভিসি বলেছিলেন, তিনি সেই শর্তগুলো পূরণ করবেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি কোনো কথাই রাখেননি। সেই ভিত্তিতেই আজ আমাদের এই অবস্থান কর্মসূচি। আমরা এর কোনো ব্যাখ্যা চাই না—আমাদের এক দফা, এক দাবি, ভিসির পদত্যাগ।”

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম ও প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। নিয়োগের দুইমাসের মধ্য শিক্ষার্থীরা ফ্যাসিস্টের সহযোগিতার অভিযোগ এনে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।