নভেম্বর ২৪, ২০২৪

রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

বন্যায় নিঃস্ব কুমিল্লার পোল্ট্রি খামারিরা, ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫৭৯টি খামার

RisingCumilla - Poultry farmers of Cumilla destitute due to floods, loss is around 308 crores
ছবি: সংগৃহীত

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখেছে কুমিল্লাবাসী। এই ভয়াবহ বন্যার ফলে কুমিল্লায় পোলট্রি শিল্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় প্রায় ৩ হাজার ৫৭৯ পোল্ট্রি খামারি নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এতে করে প্রাণিসম্পদ খাতে টাকার অংকে যার ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ প্রায় ৩০৮ কোটি টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত পোলট্রি খামারী ও সাধারণ কৃষকরা তাদের গবাধিপশু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেক খামারী। ধার-দেনা পরিশোধ নিয়ে তারা খুবই দুশচিন্ত্ায় দিন কাটছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ তালিকা অনুযায়ী দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত জেলার ভয়াবহ বন্যায় জেলাজুড়ে ২ লাখ ৯ হাজার ৯১৪ টি বিভিন্ন শ্রেণির গবাদিপশুর ক্ষতি হয়েছে। ৩১ লাখ ৬৬ হাজার ১৪৯টি হাঁস-মুরগীর মধ্যে ২১ লাখ ৭ হাজার ৩৫৩টি মুরগী, ৩১ হাজার ৬৯৩টি হাঁস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারা গেছে ১০ লাখ ২২ হাজার ৩৪২টি মুরগী এবং ২ হাজার ১৬০টি হাঁস। কয়েকজন খামারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যায় খামারীরা কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারও মুরগীর পাশাপাশি ঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো ঠিক করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে কতদিন লাগবে জানি না। তবে সরকার যদি সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে অথবা পুরনো ঋণের কিস্তিও আপাতত বন্ধ করে সুবিধা দেয় তাহলেও হয়তো ঘুরে দাঁড়ানো যাবে। তারা বলেন, গত ৩০ বছরের মধ্যে এমন লোকসানে পড়েননি খামারীরা। বন্যায় পোলট্রি-শিল্পের মালিকেরা এবার বড় লোকসানে পড়েছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, বন্যায় ছোট-বড় পোলট্রি খামারিরা আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারীভাবে আর্থিক সহায়তা জন্য তারা কাজ করছেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার আমড়াতলী ইউনিয়নের ফিরাতলী গ্রামে এবং জোড় কানন ইউনিয়নে রাজেশপুর গ্রামের চারটি আবিদাহ পল্ট্রি খামারে সকল মুরগী বন্যার পানিতে মারা গেছে।

এ চারটি খামারের স্বত্বাধিকারী আরিফুল ইসলাম বলেন, চারটি খামারে প্রায় চল্লিশ লাখ টাকার মুরগী ছিল। বিক্রয়যোগ্য এসব মুরগী বন্যার পানিতে মারা গেছে।

সদর উপজেলার ফিরাতলীর খামারী মাঈনুল হাসান বলেন, আমরা এখন ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। লোন তোলে এ খামার তিলে তিলে গড়ে তুলেছি। সরকার সহায়তা করলে হয়তো আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবো। জেলার নাঙ্গলকোট এলাকার জাহেদ পোলট্রি ফার্মের স্বত্বাধিকারী জাহেদ হোসেন বলেন, আমি ২০০১ সাল থেকে পোলট্রি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। খামারে ১০ জন শ্রমিক কাজ করে। এবারের বন্যায় খামারে প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নাঙ্গলকোটে অপর খামারী বলেন, বন্যার পানিতে তাদের ৬টি পোল্ট্রি ফার্মের সব মোরগ মারা যায়। খামারী কাজী নুরুল আলম বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ পোল্ট্রি খামারের সাথে জড়িত। খামারে ২ থেকে আড়াই কেজি ওজনের ২৫ হাজার ব্রয়লার মোরগ, ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ৫ হাজার সোনালী মোরগ ছিল পোল্ট্রি ফার্মের প্রায় অর্ধ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।

নাঙ্গলকোট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আশরাফুজ্জামান বলেন, বন্যা চলমান অবস্থায় আমরা গোখাদ্য সরবরাহ, চিকিৎসা ও পরামর্শ সেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছি। সরকারী ভাবে বরাদ্ধ আসলে পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবো।

এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, বন্যায় কুমিল্লায় অন্তত তিন হাজার ৫৭৯ টি পোলট্রি খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ২ লাখের বেশি বিভিন্ন প্রজাতির গবাদিপশুর ক্ষতি হয়েছে। প্রাণিসম্পদ খাতে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩০৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। জেলার ক্ষতিগ্রস্ত খামারীদের তালিকা করা হচ্ছে সরকারীভাবে প্রত্যেক খামারীকে সহযোগিতার জন্য আমাদের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।