গত বছরের (২০২৪ সাল) বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে নির্মিত ঘর হস্তান্তর করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরই অংশ হিসেবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গৃহহীনদের ৩০০টি ঘর হস্তান্তর করেন প্রধান উপদেষ্টা। এর মধ্যে কুমিল্লা জেলায় নির্মিত ৭০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় থেকে থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ঘর হস্তান্তর করেন।
জানা গেছে, কুমিল্লার বুড়িচংয়ে ২৯, ব্রাহ্মণপাড়ায় ১০, সদর দক্ষিণে ৬, চৌদ্দগ্রামে ১০, মনোহরগঞ্জে ১০ ও নাঙ্গলকোটে ৫টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সেনাবাহিনীর ২৪ ও ৩৩ পদাতিক ডিভিশন এসব গৃহনির্মাণ বাস্তবায়ন করে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গোলপাশা ইউনিয়নের কুমাল্লা গ্রামের উপকারভোগী মো. আলম মিয়ার বাড়ির সামনে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।
কুমিল্লা প্রান্তে বুড়িচং উপজেলার মিথিলাপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের হাতে নতুন ঘরের চাবি তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার, ৪৪ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এনামুল হক, ২৩ বীরের অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহমুদুল হাসানসহ অন্যরা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা থেকে আগত উপকারভোগীরা।
ভিডিও কনফারেন্সে বন্যা দুর্গতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “যারা বাড়ি পেয়েছেন সবাইকে অভিনন্দন। দেশের মানুষ আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে যে সাহস জুগিয়েছে সে সাহস সবসময় মনের মধ্যে ধারণ করবেন।”
২০২৪ সালের বন্যায় অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলা। অসংখ্য বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।
যেসব পরিবারের বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং যাদের ঘর নির্মাণের সামর্থ্য নেই– এরকম ৩০০ পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পুনঃনির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা যেই টাকা দিয়েছিলাম, তার অর্ধেক টাকা খরচ হয়েছে। এটা বলতে গেলে উল্টো খবর। সাধারণত বরাদ্দের দ্বিগুণ কিংবা তিন গুণ আবার চাওয়া হয়। এই অর্ধেক টাকাতে ৩০০ ঘর তৈরি হয়েছে। এটাও একটা আনন্দের খবর।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রধানের পেশা, আয়, ঘর নির্মাণে আর্থিক অসামর্থ্য, দুঃস্থতা, ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ধরন ও স্থানীয় অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে উপকারভোগী পরিবার বাছাই করা হয়।
জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসক মনোনীত প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির যৌথ জরিপের মাধ্যমে উপকারভোগীদের অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন করা হয়।
৩০০ ঘরের মধ্যে ফেনী জেলায় ১১০টি, নোয়াখালী জেলায় ৯০টি, কুমিল্লা জেলায় ৭০টি ও চট্টগ্রাম জেলায় ৩০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ঘরগুলো যেন দুর্যোগ সহনীয় ও টেকসই হয় সে লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সহযোগিতায় দুটি ডিজাইন প্রস্তুত করে।
প্রতিটি ডিজাইনে দুটি মূল কক্ষসহ কমন স্পেস, টয়লেট, রান্নাঘরসহ বারান্দা রয়েছে। প্রথম ডিজাইনের ঘরের আয়তন ৪৯২ বর্গফুট এবং প্রাক্কলিত ব্যয় ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৯৪ টাকা। দ্বিতীয় ডিজাইনের ঘরের আয়তন ৫০০ বর্গফুট এবং প্রাক্কলিত ব্যয় ৭ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ টাকা।
উপকারভোগীদের নিজের বসতভিটার স্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। ঘর নির্মাণের জন্য প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিল থেকে প্রাথমিকভাবে পঞ্চাশ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৩০০ ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৪ কোটি ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই কাজে যারা নিরলস পরিশ্রম করে গৃহহীন পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে, বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসন, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের সদস্যগণ, এলজিইডির প্রকৌশলীগণ ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের কর্মকর্তাগণ, তাদের প্রত্যেককে আন্তরিক ধন্যবাদ।”
প্রকল্পের কাজ সঠিক সময়ে সম্পন্ন করায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “এটি একটি ছোট প্রকল্প। তিনশ ঘর নির্মাণ, কিন্তু এর মাধ্যমে সঠিকভাবে কাজ করার যে দৃষ্টান্ত আমরা স্থাপন করলাম তা আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে।”
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ভবিষ্যতেও এ ধরনের দায়িত্ব দেওয়া হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তা পালন করার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকবে।
তিনি জানান, প্রকল্পের আওতায় ২৯৮টি ঘর ইতোমধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতায় দুটি ঘর নির্মাণ করা যায়নি, সেগুলো খুব শিগগিরই নির্মাণ হয়ে যাবে।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC