পুরান ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ চকবাজার এলাকা যেন ক্রমেই পরিণত হচ্ছে সহিংসতা, অপরাধী ও রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্য।
এরই সর্বশেষ বলি হয়েছেন ব্যবসায়ী মো. সোহাগ (৩৯)। গত বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম মিটফোর্ড হাসপাতাল সংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনের কাছে সন্ধ্যায় ঘটে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাথমিক তদন্তে রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট আঁতকে ওঠা কিছু চিত্র উঠে এসেছে বলে জানতে পেরেছি।
ইন্টারনেট মারফত বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানতে পারলাম, নিহত সোহাগ স্থানীয়ভাবে একজন পরিচিত ভাঙারি ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি প্রতিদিনের মতো ব্যবসার কাজ সেরে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
ঠিক সেই সময় রজনী ঘোষ লেনে তাকে ঘিরে ধরে একদল দুর্বৃত্ত। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের দাবি, একজন ব্যক্তি পাথর দিয়ে সোহাগের মাথায় আঘাত করে; সাথে সাথে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
উৎসুক মনে খোঁজ নিয়ে ও ইন্টারনেটে আরেকটু ঘাটাঘাটি করে আরো জানতে পারলাম, এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত সন্দেহে স্থানীয় যুবদল নেতা মঈনকে আটক করা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, সোহাগের সাথে মঈনের পুরনো একটি আর্থিক বিরোধ ছিল, যার পেছনে রাজনৈতিক ছায়া রয়েছে। এই বিরোধই হয়তো হত্যাকান্ডে রূপ নেয়।
রাজনীতি যদি খুনের মাধ্যম হয়ে ওঠে, তাহলে এই শহরে সাধারণ মানুষ আর নিরাপদ নয়। এখানে শুধু ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নয়, রাজনৈতিক প্রভাবও কাজ করেছে বলে আমার ধারণা।
এই হত্যাকাণ্ড একক ঘটনা নাকি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সহিংস রাজনৈতিক সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ ও পুনরাবৃত্তি; এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সচেতন মহলে।
পুরান ঢাকার রাজনীতিতে বহুদিন ধরেই স্থানীয় নেতাদের প্রভাব, অর্থনৈতিক আধিপত্য ও দলীয় দ্বন্দ্বের জটিল এক মিশ্রণ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। যেখানে দলীয় পরিচয় কখনো ঢাল, কখনো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সোহাগের মৃত্যু কেবল একজন ব্যবসায়ীর জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দেয়নি, বরং পুরো এলাকাজুড়ে ভয় ও অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলেছে।
এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের কাহিনি খুঁজতে গিয়ে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা উঠে আসছে, তা পুরান ঢাকার নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়েই বড় প্রশ্ন তোলে। এ প্রশ্নের জবাব না খুঁজে শুধু একজন অপরাধীকে আটক করলেই কি এই সহিংসতা বন্ধ হবে?
আশা রাখবো, সংশ্লিষ্ট হত্যাকারী যে দলেরই সদস্য হোক না কেন, দল থেকে যাতে তার জন্য উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হয়।
পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজনীয় এবং উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করে কঠোরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে হবে, এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। যাতে করে এ ধরনের শাস্তি দেখে ভবিষ্যতে কেউ এরকম অপরাধ করার সাহস না পায়।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC