বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই, ২০২৫

পুড়লে কী করবেন? জেনে নিন ফার্স্ট এইড থেকে হাসপাতালে যাওয়ার সব তথ্য!

প্রতীকি ছবি/রাইজিং কুমিল্লা

ইদানীং বাসা-বাড়ি বা অফিসে আগুনের ঘটনা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ভয়াবহ দুর্ঘটনায় অকালে ঝরে যাচ্ছে বহু তাজা প্রাণ, যা জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আগুন লাগলে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক হলেও, এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে ধীরস্থিরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা অত্যন্ত জরুরি।

আগুন চোখে পড়লে প্রথমেই এর উৎস এবং প্রকৃত অবস্থা যাচাই করার চেষ্টা করুন।

আগুন লাগলে কী করবেন?

অযথা চিৎকার-চেঁচামেচি না করে শুরুতেই আগুন নেভানোর চেষ্টা করুন। কিছু জরুরি পদক্ষেপ নিচে দেওয়া হলো:

  • তেলজাতীয় আগুন: তেল থেকে সৃষ্ট আগুনে পানি ব্যবহার না করে দ্রুত কম্বল, কাঁথা, ছালা বা মোটা কাপড় ভিজিয়ে আগুনের উৎস চাপা দিন। এতে অক্সিজেনের অভাবে আগুন নিভে যাবে।
  • বৈদ্যুতিক আগুন: বিদ্যুতের কারণে আগুন লাগলে দ্রুত মেইন সুইচ বন্ধ করুন। বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে পানি ব্যবহার করলে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  • পোশাকে আগুন: যদি আপনার নিজের পোশাকে আগুন লেগে যায়, ভুলেও দৌড়াবেন না। এতে বাতাস লেগে আগুন আরও বেড়ে যেতে পারে। দ্রুত মাটিতে গড়াগড়ি দিন, এতে আগুন নিভে যাবে।
  • বহুতল ভবনে আগুন: বহুতল ভবনে আগুন লাগলে তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসুন। আগুন সবসময় উপরের দিকে ছড়ায়, তাই প্রথমে উপরের তলার লোকজনকে বেরিয়ে আসার সুযোগ দিন, তারপর নিচের তলার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিন।

আগুনে পোড়ার প্রাথমিক চিকিৎসা

আগুনে পুড়ে গেলে দ্রুত সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসা জীবন বাঁচাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পোড়ার মাত্রা অনুযায়ী এর চিকিৎসা ভিন্ন হয়:

ফার্স্ট ডিগ্রি বার্ন (প্রথম মাত্রার দগ্ধ)

এটি সবচেয়ে কম গুরুতর পোড়া। এতে ত্বকের উপরিভাগের স্তর (এপিডার্মিস) ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে ত্বক লাল হয়ে যায়, সামান্য ফুলে ওঠে এবং জ্বালাপোড়া করে।

  • করণীয়: পোড়া স্থানে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে ঠান্ডা পানি ঢালুন। যদি খুব বেশি জ্বলে, একটি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেতে পারেন।

সেকেন্ড ডিগ্রি বার্ন (দ্বিতীয় মাত্রার দগ্ধ)

এই ধরনের পোড়ায় ত্বকের প্রথম স্তর সম্পূর্ণরূপে এবং দ্বিতীয় স্তর (ডার্মিস) আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আক্রান্ত স্থান লাল হয়, ফুলে যায়, ফোসকা পড়ে এবং তীব্র ব্যথা হয়। গরম পানি, গরম তরল, কাপড়ে আগুন লাগা বা গরম বস্তুর সংস্পর্শে এলে এমন পোড়া হতে পারে।

  • করণীয়: এক থেকে দুই ঘণ্টা ধরে পোড়া স্থানে ঠান্ডা পানি ঢালুন। ফোসকা ফাটানোর চেষ্টা করবেন না, এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

থার্ড ডিগ্রি বার্ন (তৃতীয় মাত্রার দগ্ধ)

এটি সবচেয়ে গুরুতর পোড়া, যেখানে ত্বকের দুটি স্তরই (এপিডার্মিস ও ডার্মিস) সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর নিচে থাকা মাংসপেশি, রক্তনালি, স্নায়ু ইত্যাদিও আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত স্থান কালো ও শক্ত হয়ে যায় এবং স্পর্শ করলেও ব্যথা অনুভূত হয় না। সরাসরি আগুন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, ফুটন্ত পানি বা বিস্ফোরণের ফলে এমন পোড়া হতে পারে।

  • করণীয়:
    • দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তিকে আগুন বা গরম উৎস থেকে সরিয়ে নিন।
    • পোড়া কাপড় শরীর থেকে সরিয়ে ফেলুন (যদি লেগে না থাকে)।
    • ডিম, টুথপেস্ট বা অন্য কোনো ঘরোয়া জিনিস ব্যবহার করবেন না, এতে কোনো উপকার হয় না বরং ক্ষতি হতে পারে।
    • আক্রান্ত ব্যক্তিকে এমনভাবে শুইয়ে দিন যাতে পোড়া অংশ খোলা থাকে।
    • ঠান্ডা পানি বা বরফ পানি দিয়ে পোড়া স্থানে ঢালতে থাকুন যতক্ষণ না জ্বালাপোড়া ও ক্ষতস্থানের গরম ভাব কমে।
    • পোড়া স্থান ফুলে যাওয়ার আগে ঘড়ি, বেল্ট, আংটি বা অন্য কোনো অলঙ্কার খুলে ফেলুন।
    • পোড়া অংশে কাপড় লেগে থাকলে তা টেনে না তুলে কাঁচি দিয়ে বাকি পোশাক কেটে সরিয়ে নিন।
    • পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত ব্যান্ডেজ বা কাপড় দিয়ে আলতো করে ক্ষতস্থান ঢেকে দিন।
    • মুখের কোনো অংশ পুড়ে গেলে পানি দিয়ে ঠান্ডা করুন। পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত কাপড় দিয়ে এমনভাবে মাস্ক তৈরি করুন যাতে নাক, মুখ ও চোখ বের করে ঢাকা যায়।
    • যদি সিলভার সালফাডায়জিন ক্রিম হাতের কাছে থাকে, ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে তা লাগাতে পারেন।
    • আক্রান্ত অংশ পরিষ্কার কাপড় বা গজ-ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে একটু উঁচু করে ধরে রাখুন।
    • আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান থাকলে তাকে লবণ-পানি, স্যালাইন, শরবত বা ডাবের পানি পান করতে দিন।
    • প্রাথমিক চিকিৎসা চলাকালীন যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
আরও পড়ুন