মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার মেঘনা নদীতে চলছে ইলিশ শিকারের অপতৎপরতা। শিকারের পর সেই মাছ উপজেলার নদী তীরবর্তী বিভিন্ন মাছের বাজারে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ এবং নৌ-পুলিশের নিয়মিত অভিযানের পরেও এই তৎপরতা থামছে না জেলেদের।
শুক্রবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কোদালপুর ইউনিয়নের মেঘনা শাখা নদীর পাড়ে ছৈয়ালকান্দির বাইদ্যাপাড়ায় ও কুচাইপট্রি আশ্রয়ণ কেন্দ্রের পাশের খালে তিনটি স্থানে অস্থায়ী আড়ৎগুলোতে প্রকাশ্য চিত্র দেখা গেছে। মাছভর্তি ট্রলার সরাসরি ঘাটে আসছে এবং বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার ছৈয়াল কান্দির পাশে বাইদ্যাপাড়ায় মা ইলিশ প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে। কিছু স্থানে লুকিয়ে বিক্রির চেষ্টা দেখা গেলেও অধিকাংশ অস্থায়ী বাজারেই চলছে দেদারসে বেচাকেনা। খালের মধ্যেই নৌকার উপর চলছে মাছের কেনাবেচা। দূরদূরান্ত থেকে পাইকার, আড়তদার এবং সাধারণ ক্রেতারা এসেছেন এসব ইলিশ কিনতে।
গ্রামবাসীরা এক-দুই হালি ইলিশ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন, আর পাইকারেরা কিনছেন ঝুড়ি ভরে। তারা মাছ পরিবহনের জন্য অটোরিকশা নিয়ে এসেছেন। মাছ কেনার সময় সাধারণ ক্রেতাদের সাথে পাইকার-আড়তদারদের কিছুটা কথা-কাটাকাটিও হচ্ছে, কারণ পাইকারদের কারণে তারা তুলনামূলক কম দামে মাছ কিনতে পারছেন না।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, অক্টোবরে ২২ দিন মা-ইলিশ ডিম ছাড়তে নদীতে উঠে আসে। ভোলা দেশের অন্যতম মৎস্য প্রজনন অভয়াশ্রম। মেঘনা ও মেঘনা শাখা নদী, জয়ন্তী নদীসহ এই অভয়াশ্রম জলসীমায় জাল ফেলা, ইলিশ শিকার, বহন, মজুদ এবং ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। মৎস্য কর্মকর্তারা বলেন, একটি মা ইলিশ নদীতে পাঁচ-ছয় লাখ ডিম ছাড়তে পারে। নিষেধাজ্ঞা সঠিকভাবে মেনে যদি ডিম ছাড়ার পরিবেশ তৈরি করা যায় এবং জাটকা সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে দেশের চাহিদা মিটিয়েও ইলিশ বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।
শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোদালপুর লঞ্চঘাটসহ কুচাইপট্রি খেঁজুরতলা মেঘনা শাখা নদীর বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে মাছ শিকারের চিত্র দেখা যায়। একদল জেলে দ্রুতগামী ট্রলার নিয়ে সারারাত মাছ শিকার করেছে, অন্যদিকে আরেকদল ভোরে ছোট নৌকা ও জাল নিয়ে মাছ শিকার করতে নেমে পড়েছে।
চাঁদপুর নৌফাঁড়ির ইনচার্জ ইহছানুল হক অভিযান চালানোর বিষয়ে বলেন, 'আমরা প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে জেলেদের, জাল, ট্রলার এবং মাছ জব্দ করছি।' তিনি বিশাল এলাকার কারণে সব জায়গায় একযোগে অভিযান চালানো সম্ভব নয় বলে স্বীকার করেন, তবে তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। তিনি মেঘনা নদীতে যেনো নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মা ইলিশ নিধন করা না হয়, সেই ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম বলেন, তারা দিনরাত মেঘনা, জয়ন্তী এবং মেঘনা শাখা নদীতে অভিযান চালাচ্ছেন। তিনি জানান, একদিকে অভিযান চলছে, অন্যদিকে জেলেরা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ ধরতে নেমে যাচ্ছেন। লোকবল সংকট থাকা সত্ত্বেও তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন বলেও জানান।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC