সাড়ে পাঁচ শতাব্দীরও বেশি পুরনো ইতিহাসকে বুকে ধরে রেখেছে কুমিল্লার ধর্মসাগর দিঘি। শুধু ইতিহাস নয়, আজও এটি নগরবাসীর কাছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি জলাশয়। নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই দিঘিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অনেক অট্টালিকা, মনোরম দৃশ্যের একটি পার্ক। ধর্মসাগর পার্ক কুমিল্লাবাসীর জন্য একটি স্বস্তির নিশ্বাসের স্থান। এখানের নির্মল বাতাস এবং সুশীতল পরিবেশ আজও মানুষকে প্রশান্তি দেয়। এটিকে নগরীর ফুসফুসও বলা হয়ে থাকে।
ধর্মসাগরের ইতিহাস: ১৪৫৮ সালে ত্রিপুরা রাজ্যের অধিপতি মহারাজ ধর্মমাণিক্য এই দিঘি খনন করেন। কুমিল্লা শহর ও তার আশপাশের অঞ্চল সে সময় তার রাজত্বের অধীন ছিল এবং এ অঞ্চলের জনগণের পানীয় জলের সুবিধার জন্য তিনি দিঘিটি খনন করেন। ১৯৬৪ সালে দিঘিটির পশ্চিম ও উত্তর পাড়টি তদানিন্তন জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে পাকা করা হয়।
এই অঞ্চলের মানুষের জলের কষ্ট নিবারণ করাই ছিল রাজার মূল উদ্দেশ্য। ‘রাজমালা’ গ্রন্থ আনুসারে মহারাজা দীর্ঘ ৩২ বৎসর রাজত্ব করেন। মহারাজা ধর্মমাণিক্যের নামানুসারে এর নাম রাখা হয় ধর্মসাগর। ধর্মসাগর নিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে বহু উপাখ্যান ও উপকথা।
বর্তমানে ধর্মসাগরের আয়তন ২৩.১৮ একর। এটির পূর্বে কুমিল্লা স্টেডিয়াম ও কুমিল্লা জিলা স্কুল, উত্তরাংশে সিটি করপোশনের উদ্যান ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় অবস্থিত। কুমিল্লার শহরবাসীর নিকট এই দিঘিটি একটি বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এখানে অবকাশ যাপনের নিমিত্ত প্রতিদিন বিপুল জনসমাগম হয়ে থাকে। অনেকেই সকালের মর্নিংওয়াকটা সেরে নেন এখানে।
ধর্মসাগরের ঐতিহ্য: শুধু কুমিল্লা নয়, বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রাচীন কয়েকটি দীঘির মধ্যে কুমিল্লা ধর্মসাগরের প্রসিদ্ধি সারাদেশেই রয়েছে। ধর্মসাগরের উত্তর কোনে রয়েছে রাণীর কুঠির, পৌরপার্ক। পূর্ব দিকে কুমিল্লা স্টেডিয়াম আর পশ্চিম পাড়ে বসার ব্যবস্থা আছে। স্থানীয় অধিবাসী ছাড়াও পর্যটকের আগমন ঘটে। দিঘিপাড়ের সবুজ বড় বড় গাছের সারি ধর্মসগরকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। তা ছাড়াও শীতকালে ধর্মসাগরে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটে।
যেভাবে যাবেন: ধর্মসাগর কুমিল্লা নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বিধায় শহরের যেকোনো স্থান থেকে এখানে সহজে যাতায়াত করা যায়।