জুলাই ২৭, ২০২৪

শনিবার ২৭ জুলাই, ২০২৪

দেশে বেড়েছে বিবাহ বিচ্ছেদের হার, ৪০ মিনিটে ১টি তালাক

দেশে বেড়েছে বিবাহ বিচ্ছেদের হার, ৪০ মিনিটে ১টি তালাক
দেশে বেড়েছে বিবাহ বিচ্ছেদের হার, ৪০ মিনিটে ১টি তালাক। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেড়েই চলেছে। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে তালাকের হার বেড়েছে। গত এক বছরে তালাকের হার বেড়ে ১ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১৩ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ভবনে বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০২২ এর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন প্রকল্প (পিডি) পরিচালক আলমগীর হোসেন জানান, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেড়েছে। শহরের তুলনায় গ্রাম এলাকায় এই স্থুল বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেড়েছে। দেশে বর্তমানে বিবাহ বিচ্ছেদের হার ১ দশমিক ৪ শতাংশ; যা ২০২১ সালে ছিল শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। এই বিবাহ বিচ্ছেদের হার পল্লী এলাকায় শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং শহর এলাকায় শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে বিবাহ বিচ্ছেদের হার দাঁড়িয়েছে ১ শতাংশ।

তিনি জানান বলেন, জনতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহ করার তিনটি পরিসংখ্যানিক স্বীকৃত পদ্ধতি হলো- শুমারি, নিবন্ধিকরণ ও নমুনা জরিপ। নিবন্ধিকরণ পদ্ধতি উন্নততর ও সুবিধাজনক পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে ১৯৮০ সাল হতে দুটি জনশুমারির মধ্যবর্তী সময়ে নমুনাভিত্তিক নিবন্ধিকরণের মাধ্যমে জনতাত্ত্বিক উপাত্তসমূহের প্রাক্কলন করা হয়ে থাকে। শুরুতে নমুনা এলাকা ছিল মাত্র ১০৩টি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জরিপের গুণগত পরিধি বৃত্তির সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে নমুনা এলাকার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০১২টি। নমুনা থানার সংখ্যা তিন পাখের ওপরে। সারাদেশে প্রত্যেকটি নমুনা এলাকায় একজন করে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ স্থানীয় মহিলা রেজিস্টার প্রতি মাসে থানা ভিজিট করে নির্ধারিত তফসিল ব্যবহার করে নিয়মিতভাবে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।

এদিকে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি। গত বছর ঢাকায় প্রতি ৪০ মিনিটে ১টি করে তালাক হয়েছে। বিচ্ছেদ বাড়ছে ঢাকার বাইরেও।

ঢাকার দুই সিটির মেয়রের কার্যালয়ের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালে তালাকের আবেদন এসেছিল মোট ১৩ হাজার ২৮৮টি। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৭ হাজার ৬৯৮টি, উত্তর সিটিতে ৫ হাজার ৫৯০টি। এ হিসাবে রাজধানীতে প্রতিদিন ভেঙে যাচ্ছে প্রায় ৩৭টি দাম্পত্য সম্পর্ক, অর্থাৎ তালাকের ঘটনা ঘটছে ৪০ মিনিটে ১টি করে। আর চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে আবেদনের সংখ্যা ২ হাজার ৪৮৮।

২০২২ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মোট তালাক হয়েছে ৭ হাজার ৬৯৮টি। এর মধ্যে স্ত্রীরা আবেদন করেছিলেন ৫ হাজার ৩৮৩টি, যা মোট আবেদনের ৭০ শতাংশ। ঢাকা উত্তরের চিত্রও একই। ২০২২ সালে সেখানে তালাকের আবেদনের ৬৫ শতাংশ নারীর।

সিটি করপোরেশন কর্মকর্তারা জানান, ডিভোর্সের আবেদনকারীদের মধ্যে নারীরাই বেশি ডিভোর্স দিচ্ছেন। তারা নিজেরাই বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন নিয়ে করপোরেশনে যান। এর মাঝে চাকরিজীবী স্বাবলম্বী নারীরাই বেশি এগিয়ে।

২০২০ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছে ৪১৪৯টি। এর আগের বছর ২০১৯ সালে বছরজুড়ে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন ছিল ৪৫৫০টি। হিসাব করে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে আবেদন বেড়েছে।

একই সময় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন হয়েছে বেশি। ২০১৯ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন ছিল ২৯১টি। অথচ ২০২০ সালে এ আবেদনের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় তিন হাজার। ২০২১ সালেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং জেলা শহরে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন অন্য বছরের তুলনায় বেশি জমা পড়েছে। ময়মনসিংহ জেলায় তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে তালাকের ঘটনা বৃদ্ধির তথ্য পাওয়া গেছে। জেলার রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পুরো জেলায় ২০২২ সালে তালাক হয়েছে ৬ হাজার ৩৯০টি।