ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ডিভাইডারে লাগানো বিভিন্ন বাহারি রঙের ফুলের সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ যাত্রী ও পথচারীরা। বিশেষ করে এই মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ হতে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পুরো মহাসড়ক ফুলে ফুলে সজ্জিত হয়ে আছে। যা দেখলে পরে যে কোন মানুষ আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়।
ফুল ভালোবাসে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। প্রতিটি মানুষেরই রয়েছে কোনো না কোনো ফুলের প্রতি দুর্বলতা। ফুল মানুষের মনে আনন্দের দোলা দেয়, মনকে করে সুরভিত। এক কথায় বলতে গেলে, ফুল সবারই ভালো লাগে।
তবে যদি ব্যাপারটা এমন হয়, দীর্ঘ একটা পথ ফুলের সৌরভ নিয়ে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে দেখতে ভ্রমণ, তাহলে কেমন হবে? হ্যাঁ, ঠিক এমন একটা দৃশ্যই রয়েছে দেশের লাইফলাইন খ্যাত ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাইলের পর মাইলজুড়ে। বর্তমানে এই সড়কে বর্ণিল এক পরিবেশে যাতায়াত করছেন যাত্রীরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নানা রঙের ফুলে সেজেছে দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। দু’পাশে এখন লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আবার কোথাও সাদা ফুলের মেলা। চার লেনের এই মহাসড়কের ডিভাইডারের উপর রয়েছে সারি সারি ফুলের বাগান।
আর সেই বাগানে ফুটে আছে কাঞ্চন, করবী, গন্ধরাজ, কুর্চি, রাধাচূড়া, জারুলসহ নানা ফুল। মধ্যখানে বাহারি ফুলে রঙিন ফুলের বাগান আর দুই পাশে পিচঢালা সড়ক। এই দৃশ্যই এখন নজর কাড়ছে ঢাকা-চট্টগ্রামে চলাচলকারী যাত্রীদের।
মহাসড়কের কুমিল্লার ১০৫ কিলোমিটার অংশে জেলার দাউদকান্দি, চান্দিনা, বুড়িচং, সদর দক্ষিণ ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা এলাকায় বেশি ফুলের দেখা মেলে।
কুমিল্লার সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে জানা যায়, মহাসড়কটি চার লেনে রূপান্তর করার পর এক লেনের গাড়ির হেড লাইটের আলো যাতে অন্য লেনের গাড়ির উপর না পড়ে, সেই জন্য ডিভাইডারের উপর রোপণ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।
ডিভাইডারের কোথাও ফুল গাছ লাগিয়ে, আবার কোথাও অন্যান্য বৃক্ষে সাজানো হয়েছে। দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত ১৯২ কিলোমিটার মহাসড়কের ১৪৩ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে।
তার মধ্যে রয়েছে কাঞ্চন, করবী, গন্ধরাজ, কুর্চি, রাধাচূড়া, হৈমন্তী, টগর, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, কদম, বকুল, পলাশসহ নানা ফুলের গাছ। এমন ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি।
এছাড়া, সড়কের পাশে এবং বিভিন্ন স্থানে ডিভাইডারের উপর লাগানো হয়েছে জলপাই, অর্জুন, কাঁঠাল, মেহগনি, শিশু, আকাশমনি, নিম, একাশিয়া, হরিতকিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৪০ হাজারের বেশি গাছ।
চান্দিনা উপজেলার এক বাসযাত্রী আ.রহিম বলেন, ফুল মানুষের মনে আনন্দ দেয়। আমাদের এলাকায় পুরো মহাসড়কে এখন ফুলের মেলা। এই পথ দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীরা ফুলের সৌন্দর্যে আকুল হয়ে পড়ে। আমরাও এসব ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।
এই ফুলের কারণে আমাদের এলাকার গুরুত্বও অনেক বেড়েছে। আমাদের মনেও দোলা দেয় ফুলগুলো। আমরা সড়কের পাশ দিয়ে চলাচলের সময় বন্ধুরা মিলে এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।
অনেক সময় ফুলের সঙ্গে ছবি তুলি। যাত্রীরা গাড়িতে বসে চোখে দেখে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। আর আমরা স্পর্শ করে সৌন্দর্য উপভোগ করি। তাই আমাদের আনন্দটাও একটু বেশি।
জেলার দাউদকান্দির গৌরিপুর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ কাউসার বলেন, আমাদের বাড়ি মহাসড়কের পাশে। তাই গত কয়েক বছর ধরে আমরা এই ফুল বাগানের পাশ দিয়ে চলাচল করি। একেক সময় একেক রকমের ফুল ফোটে। এই দৃশ্য দেখে আমাদেরও অনেক ভালো লাগে।
মহাসড়কটি দিয়ে নিয়মিত চলাচল করা পিকআপ চালক সুমন, মাইক্রোবাস চালক মোস্তফাসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালক জানান, এই ফুলের গাছ ও অন্যান্য গাছগুলো শুধু মানুষকে বিনোদনই দেয় না, এগুলো অনেক বড় উপকারও করে।
ডিভাইডারের উপর এসব গাছ থাকার কারণে রাতের বেলায় এক লেনের গাড়ির হেড লাইটের আলো অন্য লেনের গাড়ির উপর পড়ে না। ফলে এই মহাসড়কে অতীতের তুলনায় দুর্ঘটনা অনেক কমেছে। বলা চলে, দিনের বেলায় যাত্রীরা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করে, আর রাতের বেলায় গাড়ি চালকদের উপকার করে গাছগুলো।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও মহাসড়কের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ডিভাইডারের দুই পাশে রেলিং দেওয়াসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।
মূলত উন্নত দেশের মহাসড়কের সাথে তাল মিলিয়ে রাতের অন্ধকারে বিপরীতমুখী গাড়ির হেড লাইটের আলো নিয়ন্ত্রণ করে দুর্ঘটনা রোধে এবং মহাসড়কের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য গাছগুলো রোপণ করা হয়েছে। এতে মহাসড়কের সৌন্দর্য বেড়েছে। ডিভাইডারে গাছ পরিচর্যায় শ্রমিকরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC