
বর্তমানে দেশজুড়ে ডেঙ্গুর দাপটের মধ্যেই মশাবাহিত আরেক রোগ চিকুনগুনিয়া নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে, যা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সতর্ক করেছে যে, চিকুনগুনিয়া ভাইরাস আবার ফিরে এসেছে এবং বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫৬০ কোটি মানুষ এই ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে। যদিও ডেঙ্গুর মতো চিকুনগুনিয়া প্রাণঘাতী নয়, তবে এর জ্বর-পরবর্তী গিঁটের ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে মানুষকে কাবু করে ফেলে।
২০০৫ সালে বিশ্বজুড়ে চিকুনগুনিয়া বড়সড় আকার ধারণ করেছিল, যা ডেঙ্গুর তুলনায় কিছুটা উপেক্ষিতই ছিল। কিন্তু বর্তমানে এর চিকিৎসা পদ্ধতির সীমাবদ্ধতার কারণে ভাইরাসটি আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পাশাপাশি ইউরোপ এবং অন্যান্য মহাদেশেও এই রোগের নতুন প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সংস্থাটি ২০০৪-২০০৫ সালের মহামারির পুনরাবৃত্তি রোধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
চিকুনগুনিয়া: কী এবং কেন আতঙ্ক?
চিকুনগুনিয়া ভাইরাস প্রথম আফ্রিকায় শনাক্ত হয়। স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাই (Aedes aegypti) ও এডিস অ্যালবোপিকটাস (Aedes albopictus) মশার লালাবাহিত হয়ে এটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এই রোগের প্রধান লক্ষণ হলো শরীরের অস্থিসন্ধি বা গিঁটে ভয়ানক ব্যথা, যা অনেক সময় “অস্থিসন্ধির জ্বর” নামেও পরিচিত। এছাড়াও রোগীর সারা শরীরে অস্বস্তি, গায়ে ও মুখে লাল র্যাশ দেখা যায়।
ডব্লিউএইচওর মেডিকেল অফিসার ডায়ানা রোজাস আলভারেজ জেনেভায় সাংবাদিকদের জানান, চিকুনগুনিয়া উচ্চ জ্বর, গিঁটে ব্যথা এবং দীর্ঘমেয়াদী অক্ষমতা সৃষ্টি করতে পারে। তিনি আরও বলেন, “আমরা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছি। ২০০৪-২০০৫ সালের মহামারির সাথে এবারও সাদৃশ্য রয়েছে, তখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আগে মূলত ছোট দ্বীপ অঞ্চলগুলোতে প্রায় ৫ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।”
প্রাদুর্ভাবের বর্তমান চিত্র:
২০২৫ সালের শুরুর দিক থেকেই চিকুনগুনিয়ার এবারের প্রকোপ শুরু হয়েছে। লা রিইউনিয়ন, মায়োট এবং মরিশাসসহ ভারত মহাসাগরের যেসব দ্বীপে এর আগেও প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল, সেখানেই এবারও এর ব্যাপক বিস্তার লক্ষ্য করা গেছে। রোজাস আলভারেজ জানান, লা রিইউনিয়নের জনসংখ্যার আনুমানিক এক-তৃতীয়াংশ ইতিমধ্যেই সংক্রমিত হয়েছে। ভাইরাসটি এখন মাদাগাস্কার, সোমালিয়া এবং কেনিয়ার মতো দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। একইসাথে ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও এটি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চিকিৎসা ও সতর্কতা:
দুর্ভাগ্যবশত, ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস দমনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ বা টিকা নেই। মূলত উপসর্গের মোকাবিলা করাই এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা। তবে চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে জ্বরের দেড়-দু’বছর পরেও ব্যথার প্রকোপ চলতে পারে, যা রোগীদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মশাবাহিত যেকোনো রোগ থেকে সতর্ক থাকার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে। সঠিক সময়ে রোগের সঠিক শনাক্তকরণ এবং উপযুক্ত চিকিৎসা এক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। এর পাশাপাশি, মশার কামড় থেকে বাঁচতে নিয়মিত মশারি ব্যবহার এবং মশার বংশবিস্তার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: রয়টার্স ও আনন্দবাজার।