মঙ্গলবার ২৯ জুলাই, ২০২৫

টাকা তুলে রাখার প্রবণতায় ব্যাংক খাতে কমছে আমানত প্রবৃদ্ধি

Bangladesh Bank
বাংলাদেশ ব্যাংক | ফাইল ছবি

ব্যাংক খাতের সাম্প্রতিক অগ্রগতির ধারা থেমে আবারও কমতে শুরু করেছে আমানত প্রবৃদ্ধি। একীভূতকরণ ও অবসায়নের গুঞ্জনে গ্রাহকদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ফলে আমানতকারীরা টাকা তুলে হাতে রাখছেন। এর প্রভাবে আমানত প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।

ব্যাংক খাতের সাম্প্রতিক অগ্রগতির ধারা থেমে আবারও কমতে শুরু করেছে আমানত প্রবৃদ্ধি। একীভূতকরণ ও অবসায়নের গুঞ্জনে গ্রাহকদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ফলে আমানতকারীরা টাকা তুলে হাতে রাখছেন। এর প্রভাবে আমানত প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের মে শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৮ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি। অথচ, গত মার্চে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। এরপর থেকে তা কমতে থাকে। মার্চ পর্যন্ত আমানত কমার তালিকায় ছিল ১১টি ব্যাংক, যা মে মাসে বেড়ে দাঁড়ায় ১৬টিতে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর কয়েকটি ব্যাংকের আর্থিক দুরবস্থা প্রকাশ্যে এলে আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আমানত প্রত্যাহারের চাপ বাড়ে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তারল্য সহায়তায় পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছিল, তবে মে মাসে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ জারি হওয়ায় একীভূতকরণ সংক্রান্ত অনিশ্চয়তায় নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, এক্সিম, সোস্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী এবং ইউনিয়ন ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের একীভূতকরণের আলোচনায় থাকা এবং প্রকৃত আর্থিক চিত্র সামনে আসার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি অন্যান্য কিছু ব্যাংকেও আমানত প্রত্যাহারের চাপ বেড়েছে।

ঈদের মৌসুমে সাধারণত নগদ টাকার ব্যবহার বাড়ে। তবে এবার সেটি রেকর্ড ছুঁয়েছে। গত কোরবানি ঈদের আগে, ৫ জুন, প্রচলনে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৩৯ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগের মাস, মে শেষে, প্রচলনে থাকা নগদ ছিল ৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। আর গত বছরের কোরবানির ঈদের আগে এই অঙ্ক ছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা।

ব্যাংকারদের দাবি, একীভূতকরণ বা অবসায়ন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত স্পষ্টভাবে ও দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর না হলে সাধারণ মানুষের আস্থা আরও কমে যেতে পারে। একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যে কোনো ব্যাংকের ক্ষেত্রে একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর করা না হলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, যার প্রভাব পড়ে পুরো ব্যাংক খাতে।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মে মাস শেষে ব্যাংক খাতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১৯ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি। ফলে ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) দাঁড়িয়েছে ৮১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে। কিন্তু কিছু সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ অনুপাত নির্ধারিত সীমার অনেক ওপরে চলে গেছে।

যেসব ব্যাংকের আমানত সবচেয়ে বেশি কমেছে তাদের মধ্যে রয়েছে- বেসিক ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ইউনিয়ন এবং কমিউনিটি ব্যাংক। এ ছাড়া বিদেশি মালিকানাধীন আলফালাহ, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, উরি, হাবিব এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের আমানতও কমেছে। তবে বিদেশি ব্যাংকগুলো মূলত এলসি ও কমিশনভিত্তিক ব্যবসার ওপর বেশি নির্ভর করে এবং তাদের সুদের হার কম হওয়ায় আমানতপ্রবণতাও কম থাকে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় অতীতের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি, একক গ্রুপের বিপুল পরিমাণ ঋণ গ্রহণ, এবং খেলাপির পরিমাণ বৃদ্ধি- সব মিলিয়ে ব্যাংক খাত আজ চরম আস্থাহীনতায় পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরইমধ্যে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোতে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ঋণ দিয়েছে। একীভূতকরণের জন্য নির্ধারিত পাঁচ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা তাদের মোট ঋণের প্রায় ৭৭ শতাংশ।

আরও পড়ুন