জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট ১০৬ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক কারণ দর্শানোর নোটিশ ও ২০২৪ সালের আন্দোলন চলাকালীন হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে চলমান ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন একাধিক সহিংস ঘটনার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত সাবেক ও বর্তমান ১০৬ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে জানানো হয়েছে, ইতোমধ্যে পত্রিকায় এই বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে ও তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে প্রশাসন বরাবর তাদের বক্তব্য জানাতে বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালের আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণের ওপর ধারাবাহিকভাবে যে সশস্ত্র হামলা, ভীতিকর তাণ্ডব এবং রাতের অন্ধকারে হলে হলে ঢুকে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন চালানো হয়; এসব ঘটনার সুনির্দিষ্ট ভিডিও ফুটেজ, ভুক্তভোগীদের অভিযোগপত্র এবং তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে একাধিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সক্রিয় কর্মী এবং কিছু হল প্রশাসনের সহযোগিতাকারী শিক্ষার্থীর নাম রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আরো বলা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালার পরিপন্থী কার্যকলাপে যুক্ত ছিলেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থী।
এ কারণে কেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না; তা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না পেলে প্রশাসন পরবর্তী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও জানানো হয়।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের সময় ক্যাম্পাসে সংঘটিত হামলার ঘটনায় সেসময় থেকেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি করে আসছিলেন। তবে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর সম্প্রতি প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে আংশিক সুবিচার হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
একই সাথে শিক্ষার্থীদের অনেকেই বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে সাবেক ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের একচ্ছত্র আধিপত্য ও দমনমূলক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
অন্যদিকে অভিযুক্তদের অনেকের দাবি, এই নোটিশ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল এবং এর মাধ্যমে একপাক্ষিকভাবে ছাত্রলীগকে টার্গেট করা হচ্ছে। তাদের মতে, আন্দোলনের সময় উসকানিমূলক কার্যকলাপেও অনেক শিক্ষার্থী যুক্ত ছিলেন, যাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত হওয়া উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "যারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে, যারা ভয়ভীতি ছড়িয়েছে, তারা কেউই ছাড় পাবে না; এই বার্তা প্রশাসন দিতে চায় বলেই মনে হচ্ছে। তবে এই প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছ ও পক্ষপাতহীন হয়, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।"
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম জানিয়েছে, অভিযুক্তদের উত্তর পাওয়ার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে এবং প্রয়োজন হলে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার কিংবা স্থায়ী শাস্তির সিদ্ধান্তও আসতে পারে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করা হচ্ছে। নোটিশপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অনেকেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, আবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটি ছাত্র রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে বলেই মনে করছেন প্রশাসন, সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC