জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ২০২৫ সালের ২১ মে’র মধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এবং সে অনুযায়ী গত ৩০ এপ্রিল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখও ধার্য করা হয়েছিল, যা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের ন্যূনতম ২১ দিন আগে হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন গুলোর সাথে গত ২৯ এপ্রিল রাত প্রায় ৮ টা থেকে জাকসু সংক্রান্ত আলোচনা শুরু হয়ে দীর্ঘ ১০ ঘণ্টারও বেশি সময়ব্যাপী সেই মিটিং শেষ হয় গত ৩০ এপ্রিল সকালে।
সবকিছু ঠিক থাকলে দীর্ঘ প্রায় ৩২ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইল ফলক হিসেবে বিবেচিত ও আলোচিত হচ্ছে। একই সময়ে ও একই দিনে হল সংসদ নির্বাচনের তারিখও নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকাও প্রকাশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ১৯৯২ সালে জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
নির্বাচন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিবেশ পরিষদও গঠন করেছে, যা নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন ও তফসিল ঘোষণার পর বিস্তারিত তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও নির্ধারিত নির্বাচনী পোর্টালে পাওয়া যাবে বলে একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে। সে অনুযায়ী ২০২৫ এর ১১ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা, ১৫ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা, ২৫ জানুয়ারি নির্বাচনী আচরণবিধি প্রণয়ন এবং ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার কথা ছিল। তবে, ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তফসিল ঘোষণা না হলে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম বন্ধেরও আল্টিমেটাম দিয়েছিল তখনকার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
নির্বাচন কমিশন গঠনের পর গত ১১ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়। নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ভোটার তালিকা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান জানিয়েছেন, জাকসু নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে প্রশাসন ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। তবে, নির্বাচনের আগে গঠনতন্ত্র সংস্কার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
জাকসু নির্বাচনের আগে নির্বাচনী গঠনতন্ত্র ও বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের দাবি জানিয়েছে শাখা ছাত্রদল সহ প্রগতিশীল কয়েকটি ছাত্র সংগঠন। শাখা ছাত্রদল গত ২২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করে, যাতে গঠনতন্ত্র সংস্কার ও জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে হামলায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের বিচার দাবি করা হয়। পাশাপাশি তারা গত ২৬ এপ্রিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর আরো একটি স্মারকলিপি প্রদান করে, এবং গত ২৮ এপ্রিল "March For Justice" কর্মসূচি পালন করে, এর মাধ্যমেও বিভিন্ন সংস্কারের দাবি জানানো হয়। গত ২৯ এপ্রিল "বাংলাদেশ গনতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়" শাখাও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তফসিল ঘোষণা ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। "বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়" শাখাও একাধিক সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক বলেন, "দীর্ঘ ৩২ বছর পরে জাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে আগামী ৩১ জুলাই, এটি খুবি আনন্দের বিষয়। জাকসু সকল শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি ছিলো। এটি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলেরও প্রাণের দাবি এবং এই দাবিটি বিগত ১৭ ধরে ছাত্রদল জানিয়ে আসছে। আপনারা জানেন বিগত তিনটি নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জাকসু কেন্দ্রীয় সংসদ এবং হল সংসদে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছে। আমরা এবারও জাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদ এবং হল সংসদে পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হবো আশা করছি। আমরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের নির্দেশে আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। জাকসুর পরিবেশ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের বিচার সুনিশ্চিত করতেই হবে।"
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মহিবুর রহমান মুহিব জানান, "জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর ছাত্রদের প্রাপ্য সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। আমরা আশা করি, নির্বাচনের পূর্বে জুলাইয়ে সংঘটিত হামলার সুষ্ঠু বিচার, একটি অংশগ্রহণমূলক, নিরাপদ ও স্বচ্ছ পরিবেশ নিশ্চিত করে যথাসময়ে জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে জাবি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. সাফায়েত মীর বলেন, "নানা নাটকীয়তা এবং বারবার তফসিলের ডেট পেছানোর পরও অবশেষে জাকসুর তফসিল ঘোষণা করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। গনঅভ্যুথান পরবর্তী সময়ে জাকসু ছিল সকল শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবী। এবং সঙ্গত কারণেই এই জাকসু জাতীয় রাজনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জুলাই হামলার অপরাধীদের বিচারের প্রাতিষ্ঠানিক কাজ সম্পন্ন করে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, গ্রহনযোগ্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন উপহার দিবে।"
উল্লেখ্য, গত ৩০ এপ্রিল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ ও আগামী ২১ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এবং তফসিল ঘোষণা করলেও, প্রশাসনিক বিভিন্ন কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনেক কাজই সম্পন্ন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দুই মাস পিছিয়ে নির্বাচনের পরিবর্তিত ও নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৩১ জুলাই ২০২৫।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC