ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫

রবিবার ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া দখল নেন মান্নু

Rising Cumilla - Cumilla University
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার দখল নিয়েছেন বর্তমান পরিচালক মহিউদ্দিন মজুমদার মান্নু।

জানা গেছে, ছয় বছরের বেশি সময় অবৈধ মালিকানায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনা করছেন তিনি। তাঁর বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সর্বশেষ কমিটির ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ, কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক এ কে এম আবদুল আজিজ সিহানুক, গলিয়ারা ইউনিয়ন যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও মান্নুর ভাই নান্নু মজুমদারসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর প্রভাব খাটিয়ে ক্যাফেটেরিয়া দখল নেন তিনি। এরপর ২০২২ সালে ক্যাফেটেরিয়ার ভাড়া ১৫ হাজার টাকা ধার্য্য করে দেয় প্রশাসন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভাড়া পরিশোধ করলেও এরপর থেকে আর কোন ভাড়া পরিশোধ করেনি মান্নু। এরপর ২০২৪ এর ৫ই নভেম্বর ক্যাফেটেরিয়ার ভাড়া বাবদ যেই ১৫ হাজার টাকা ধার্য্য করা হয়েছে সেটা পরিশোধ করার জন্য রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে চিঠি দেওয়া হয়। ভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় ক্যাম্পাসে মান্নু না গিয়ে কর্মচারী শরীফকে দিয়ে ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনা করছেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৩ জুন দরপত্র অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হন সৈয়দ এন্টারপ্রাইজের পরিচালক সৈয়দ আতিকুর রহমান। এরপর ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনার নিমিত্তে পঞ্চাশ হাজার টাকা জামানত জমা দেন তিনি। এরই প্রেক্ষিতে ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালকের দায়িত্ব পান আতিকুর রহমান। ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনার জন্য ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় মাসুদ আলমকে। এরপর নোমান ও পরবর্তীতে মান্নু মজুমদার ম্যানেজার ছিলেন। এরপর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে ক্যাফেটেরিয়া দখল নেন মান্নু। এরপর আর কোন টেন্ডার হয়নি। সৈয়দ এন্টারপ্রাইজের দরপত্রের ভিত্তিতেই এতোদিন ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনা করে আসছেন মান্নু মজুমদার। যদিও তিনি বলেন ২০১৯ সালে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ ক্যাফেটেরিয়ার টেন্ডার নিয়েছেন এবং তাঁর আন্ডারে কাজ করেছেন মান্নু।

এ সব বিষয়ে সৈয়দ আতিকুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ফ্যাসিষ্ট সরকারের কিছু কুচক্রী মহল আমাকে ক্যাফেটেরিয়া চালাইতে দেয় নাই। মান্নু আমার কর্মচারী ছিল। কিছুদিন কাজ করার পরে ইলিয়াস হোসেন সবুজ আমাকে একদিন বলতেছে আপনি আর এখানে আইসেন না। আমাকে ক্যাম্পাসে যেতে দেইনি। হুমকি দিয়েছে। সিহানুক ও নান্নু স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী নিয়ে এসে আমাকে হুমকি দেয়। যাতে আমি ক্যাম্পাসে না যাই। পরে আমি আমার এবং আমার পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ক্যাম্পাসে আর আসিনি। আমি বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনা করিতে ইচ্ছুক। সেই সময় আমি বিষয়টি সৈয়দুর রহমান স্যারকে জানিয়েছি। ওনাকে জানানোর পর উনি বলেছেন বিষয়টি দেখবেন। আমাকে রেজিস্ট্রার মজিবুর রহমান বলেন আপনি চিঠি দেন। চিঠি দেওয়ার পরে আমরা প্রশাসনের সাথে বসে ঠিক করে দিব। ওনার আশ্বাসে আমি চিঠি দিয়েছি।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াস বলেন, ‘আমি কেন ক্যাফেটেরিয়ায় টেন্ডার নিব৷ বরং ছাত্রলীগের দীপ্ত, শান্ত ওরা আমাকে এসে আমাকে বলেছে আমি যাতে এটা মান্নুকে নিয়ে দেই। পরে আমি এটা মান্নুকে নিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। আমি ক্যাফেটেরিয়া দখল করিনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: সৈয়দুর রহমান বলেন, ‘কিং ফিশারের মালিকানায় ছিল ক্যাফেটেরিয়া৷ আমাকে মালিক জানিয়েছে ছাত্রলীগ তাঁকে চাপ দিচ্ছে। আর মান্নু তাকে ক্যাফেটেরিয়ায় আসতে বারণ করে।’

এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনার দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেন আতিকুর রহমান। এরপর গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আবদুল্লাহ আল মাহবুবকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

ছাত্র পরামর্শ ও দপ্তরের পরিচদলক আবদুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, ‘মান্নু আগের পরিচালক চলে যাওয়ার পর ২০১৯ সাল থেকেই কোন প্রকার চুক্তি ছাড়াই চালাচ্ছে। ১৫ হাজার টাকা করে তাঁর থেকে ভাড়া নেওয়া হতো। গত এক বছরের বকেয়া রয়েছে। বর্তমানে মান্নুর কর্মচারী শরীফ সাময়িক সময়ের জন্য চালাচ্ছে। আমরা ক্যাফেটেরিয়ার সংস্কার করতেছি। এই মাসের মধ্যে নতুন কাউকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করব। এরপর টেন্ডারের মাধ্যমে যারা পাবে আমরা তাদেরকে হস্তান্তর করব।’

অভিযোগের বিষয়ে মান্নু মজুমদার বলেন, ‘অন্যের টেন্ডারের উপর ছিল। আমি কোন টেন্ডার, জামানত আমি দেইনি। সেটা সৈয়দ এন্টারপ্রাইজ কিনা আমি জানিনা। আমি এখানে কর্মচারী হিসেবে ছিলাম। তখন কিং ফিশার চালাইতো। ওরা না থাকার কারণে পরে আমি চালাইছি। পরে ইমরান স্যার আসার পর ইলিয়াসকে দায়িত্ব দিল। আমি শুধু পরিচালনা করেছি। ইমরান স্যারের পর মঈন স্যার আসে। উনি আসার পরে আমার থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে যেত প্রতিমাসে। আর আমাকে বলছিল পেপার গুছিয়ে দিবে কিন্তু দেওয়া হয়নি। কাউকে ভাগানোর মতো ক্ষমতা আমার নেই। এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমি এখানে কারো ক্ষমতা ব্যবহার করে ক্যাফে দখল করিনি।’

কোষধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘আমরা একটা চিঠি পেয়েছি। আমরা সৈয়দ এন্টারপ্রাইজের সাথে বসে বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা নিব।’