ছয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা কোটবাড়িতে অবরোধ করেছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। অবরোধে শহরের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সরকারি বেসরকারি শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) বেলা পৌনে ১২টা থেকে শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন, যার ফলে মহাসড়কের উভয় পাশে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা পৌনে বারোটার দিকে কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় মহাসড়কে এসে জড়ো হন। এরপর তারা আকস্মিকভাবে মহাসড়কের উপর বসে পড়েন, যার ফলে মুহূর্তেই ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী লেনের যানবাহন আটকা পড়ে। অবরোধের কারণে আটকা পড়া যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে দুপুর পৌনো ২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মহাসড়কের দুই লেনে অন্তত ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট ছিল।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুমিল্লা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সাইফুল মালিক বলেন, সড়কের অবস্থা খারাপ। যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে কুমিল্লা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। চারদিকের সড়ক বন্ধ। আমাদের ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। শিক্ষার্থীরা উঠে গেলেই কেবল সচল হবে সড়ক।
অন্যদিকে রাইজিং কুমিল্লার (কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট) প্রতিনিধি মিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, 'সেনাবাহিনী এবং পুলিশ শিক্ষার্থীদের প্রথমে মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করে। সেনাবাহিনী বলে, প্রয়োজনে তোমরা অন্য সড়ক অবরোধ করো। শিক্ষার্থীরা জানায় তাদের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না। তখন আর্মি বাধ্য হয়ে পর্যায়ক্রমে ফাঁকা গুলি করতে থাকে। একপর্যায়ে আর্মি ছাত্রদের উপর লাঠি চার্জ করে। শিক্ষার্থীর কাছ থেকে খেলার বেট কেড়ে নিয়ে নির্মম ভাবে তাদেরকে পেটানো হয়। এতে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।'
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ছয় দফা দাবিগুলো হলো:
১. জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের জন্য ৩০ শতাংশ পদোন্নতি কোটা বাতিল এবং তাদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বহাল রাখা। একইসাথে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন এবং এই সংক্রান্ত মামলার সাথে জড়িতদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের অন্ধকারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল এবং বিতর্কিত নিয়োগবিধি সংশোধন করতে হবে।
২. ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের বাধ্যবাধকতা বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের মতো চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু এবং পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
৩. উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের (১০ম গ্রেড) পদে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য সংরক্ষিত পদগুলোতে অন্যান্যদের নিয়োগের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. কারিগরি সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ পদ যেমন পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত ব্যক্তিদের নিয়োগ বন্ধ করতে হবে এবং আইনগতভাবে তা নিশ্চিত করতে হবে। এসব শূন্য পদে দ্রুত কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল এবং দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
৫. একটি স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের জন্য একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। এছাড়া, নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস এবং ডুয়েটের অধীনে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে শতভাগ আসনে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC