
কুমিল্লা শহরের এক হোটেল থেকে ক্যামেরার লেন্স চুরির ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আইন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আনাস আহমেদ এবং তার সহপাঠী শামিম ভূইয়ার বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে মাদকের টাকা জোগাড় করতে তারা এই চুরির ঘটনা ঘটিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রাত সাড়ে আটটায় ক্যাম্পাসে আনাস আহমেদকে মারধর করেছে বহিরাগত কয়েকজন যুবক।
২৫ এপ্রিল (শুক্রবার) শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সামনে এ মারধরের ঘটনাটি ঘটেছে।
জানা গেছে, কুমিল্লা শহরের একটি হোটেলে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে আনাস আহমেদ ও তার সহপাঠী শামীম ভূঁইয়া ফটো ও ভিডিওগ্রাফি এজেন্সি ‘নওয়াব’ এর একটি ক্যামেরার লেন্স চুরি করেন। তাৎক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরায় আনাস এবং শামীমকে শনাক্ত করে ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে , তারা কিছু সময় অনুষ্ঠানস্থলে ঘুরাঘুরি করে এবং একপর্যায়ে আনাস স্টেজের পেছনে গিয়ে একটি ব্যাগের চেইন খুলে তল্লাশি চালায়। পরে তিনি একটি ব্যাগে হাত দিয়ে পকেটে কিছু রাখার মতো আচরণ করে এবং পরে ওই স্থান ত্যাগ করে। সিসিটিভি ফুটেজটি যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সেখান থেকে আনাস এবং শামীমের পরিচয় উঠে আসে। এরপর রাত সাড়ে আটটার দিকে রাব্বি এলাহীর নেতৃত্বে ক্যাম্পাস এরিয়ায় ৫-৬টি বাইক নিয়ে কিছু যুবক এসে আনাসকে একটি দোকানে নিয়ে মারধর করে। মারধর শেষে তার থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করে নেয়। হামলাকারীরা তাকে অপহরণেরও চেষ্টা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মারধরকারী তিনজন যুবককে আটক করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসে। আর বাকীরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে রেকর্ডকৃত স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। ফলে প্রক্টর অফিসে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী প্রক্টর মাহমুদুল হাসান, মামুন চৌধুরী, কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রভোস্ট মো. হারুন, হাউজ টিউটর খন্দকার ওলিউল্লাহ।
‘নওয়াব ফটোগ্রাফি’ টিমের সদস্য রাব্বি এলাহিকে বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে এসে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, “আমার ব্যবহৃত VILTROX 85mm prime 1.8 লেন্সটি খোয়া গেলে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করি সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করা হয় এবং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। আমি আসার আগে হয়তো মারধর করেছে। তবে আমি মারধর করিনি।”
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আনাস আহমেদ তার বিরুদ্ধে ওঠা চুরির অভিযোগ স্বীকার করেন। চুরিরকৃত লেন্সের অবস্থানের কথা পুলিশকে জানান। তবে মারধর করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও প্রচার করে তার সম্মানহানির বিচার দাবি করেন।
জানা যায়, চুরির অভিযোগ স্বীকারের পর আনাসের দেয়া জবানবন্দির আলোকে তার সহপাঠী শামীমের বাসা থেকে পুলিশ ক্যামেরার লেন্সটি উদ্ধার করতে সামর্থ্য হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম বলেন, যে লেন্সটি চুরি করা হয়েছে সেটি আমরা উদ্ধার করে পুলিশকে বুঝিয়ে দিয়েছি। এরপর আমরা বসে আমাদের সিদ্ধান্ত নিবো এবং থানাও তাদের সিদ্ধান্ত নিবে।
এ বিষয়ে সদর দক্ষিণ থাকার ওসির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আনাস ও শামীম দীর্ঘদিন ধরেই নেশা আসক্তিতে জড়িত। অভিযোগ রয়েছে, নেশার টাকা জোগাড় করতেই তারা এই চুরির পথ বেছে নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারী আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আনাসকে গাঁজাসহ রাতের বেলা শহীদ মিনার থেকে আটক করে প্রক্টরিয়াল বড়ি। সে সময় মুছলেখা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে আনাস নজরুল হলের কিছু শিক্ষার্থী নিয়ে নিয়মিত মাদক সেবন করেন।