মে ৩০, ২০২৫

শুক্রবার ৩০ মে, ২০২৫

চান্দিনার মোকামবাড়ি-বদরপুর সড়ক বেহাল: বিকল্প পথে বাড়তি ভাড়া গুনছেন যাত্রীরা

Rising Cumilla - Chandina's Mokambari-Badarpur road in disrepair- Passengers are paying extra for alternative routes
ছবি: প্রতিনিধি
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মোকামবাড়ী হইতে বদরপুর বাজার হইয়া যে সড়কটি জলম বরুড়া ও নবাবপুর কচুয়া পর্যন্ত গিয়েছে সেই সড়কটি অতি জন গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। চান্দিনা  উপজেলা সদরটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলার শেষ উত্তর প্রান্তে অবস্থিত।
চান্দিনা উপজেলা সদরে সরকারি অফিস আদালত অবস্থিত হওয়ায় উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে বিভিন্ন সরকারি কাজে ও বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত এই সড়কটি দিয়ে উপজেলা সদরে আসা যাওয়া করতে হয়। দীর্ঘদিন যাবত সড়কটি অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে থাকার কারণে সড়কের মধ্যে পৌরসভার ময়লা ফেলার স্থান হিসাবে বেছে নেয়া হয়েছে এবং সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সড়কেতে শুধু ময়লা স্তুপই জমা হয়নি, পুরা সড়কটিতে বড় বড় গর্তের  সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে এখন সড়কটি ব্যবহারে অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
এখন এ সড়কে দিয়ে যানবাহন পরিচালিত না হয়ে বিকল্প সড়ক ফাঐ – এতবারপুর হয়ে লোকজনকে চান্দিনা সদরে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে। বিকল্প সড়কের যানবাহন চলাচলের কারণে চালকরা যাত্রীদের নিকট থেকে  অতিরিক্ত ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে। যা নিয়া যাত্রীদের সাথে চালকদের মধ্যে প্রায় সময় বিভিন্ন সংঘর্ষ হয়ে থাকে।
পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠার দুই যুগেও গড়ে উঠেনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিজস্ব কোন ডাম্পিং সেন্টার। বিভিন্ন সময় স্থান পরিবর্তন করে বিভিন্ন সময়ে সড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে পৌর এলাকার সব ময়না-আবর্জনা। দীর্ঘ কয়েক বছর একই স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় ওইসব এলাকায় দেখা দেয় চরম জনদুর্ভোগ।
১৯৯৭ সালে চান্দিনা পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনো মহাসড়কের পাশে আবার কখনো আঞ্চলিক সড়কগুলোর পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পৌর কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থান বেছে নেয় গুরুত্বপূর্ণ চান্দিনা-বদরপুর সড়কের ডুমুরিয়া ব্রিজ এলাকা। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা সদরে যাতায়াতের অন্যতম প্রবেশপথ ওই চান্দিনা-বদরপুর সড়ক। সড়কের প্রবেশদ্বারে পৌরসভার ময়লা-আবর্জনার স্তূপ দেখে মনে হয় রাস্তা তো নয় যেন ময়লার ভাগাড়!
পৌর কর্তৃপক্ষের চরম অব্যবস্থাপনায় সড়কের উপর ফেলা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সড়কে চলাচলরত যাত্রী ও পথচারীরা। ওই সড়কে চলাচলরত স্কুল, কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষদের নাক-মুখ চেপে অতিক্রম করতে হচ্ছে সড়কের ওই অংশটি। এতে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এলাকার বাসিন্দারাও।
সড়কটির দুইশ’ মিটারেরও বেশি এলাকাজুড়ে দুই পাশে প্রতিদিন ময়লা-আবর্জনা ফেলায় দিনে দিনে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে পাকা সড়কটি। এতে যান চলাচলেও চরম ভোগান্তি দেখা দিচ্ছে।অন্যদিকে, দীর্ঘদিন যাবত ওই স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে পাশের সরকারি খাল ও মানুষের জয়গায়ও ময়লার স্তূপে চাপা পড়ে যাচ্ছে।
ওই সড়কে চলাচলরত যাত্রী উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের করতলা গ্রামের বাসিন্দা রাজন সরকার জানান, সড়কটি দিয়ে উপজেলার বরকরই, মাইজখার, বাড়েরা, মহিচাইল ও কেরণখাল ইউনিয়নের হাজারও মানুষের প্রতিদিনের যাতায়াত। যখনই ডুমুরিয়া ব্রিজের কাছাকাছি আসি তখনই নাকে-মুখে কাপড় বা টিস্যু চাপা দিতে হয়। পৌরসভার এমন অব্যবস্থাপনা মোটেও জনগণের কাম্য নয়।
সিএনজি চালক বিল্লাল হোসেন জানান, যাত্রীরা নাক-মুখ চেপে ধরার সুযোগ থাকলেও আমরা যারা ড্রাইভার প্রতিদিন দুর্গন্ধ নিয়েই চলাচল করছি। ওই ময়লার স্তূপে প্রায় সময় আগুন দেয়া হয়। ওই আগুনে আবর্জনার সঙ্গে থাকা পশু-পাখির মরদেহ পুড়ে পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। অনেক যাত্রী ওই দুর্গন্ধে বমিও করে ফেলে। স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম মুন্সি জানান, ডুমুরিয়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় আমার ১২ শতাংশ জমি রয়েছে। যখন থেকে ওই স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা শুরু করেছে তখন আমরা বাঁধা দেই। কিন্তু কেউ আমাদের কথা কর্ণপাত করেনি। সড়কের দুইপাশে ময়লার স্তূপ বেড়ে যখন আমাদের জায়গা ভরাট হয়ে যাচ্ছিল তখন আমরা মেয়র মফিজুল ইসলামকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘জায়গা বিক্রি করে চলে যাও’। এখন নতুন মেয়র আসছেন, আমরা ওই মেয়রকেও জানাই। তিনিও কোন ব্যবস্থা করেননি।
মহারং গ্রামের আবদুল আলিম অভিযোগ করেন- তার বাড়ির সামনে সড়কের পাশে প্রতি রাতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে যায় পৌরসভার কর্মীরা। এতে তার পরিবারসহ আশপাশের লোকজনদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন সুরাহা পাননি তিনি।
সড়কটির সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে বারবার অবহিত করলেও তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসন থেকে বারবার বলা হচ্ছে হবে কিন্তু এখনো হচ্ছে না। উপজেলা বিভিন্ন এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও যার যার অবস্থান থেকে সড়কটির সংস্কারের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিভিন্নভাবে। জরুরী ভিত্তিতে বিষয়টির প্রতি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে এলাকার বিজ্ঞ মহল মনে করেন।
আরও পড়ুন