মে ২৮, ২০২৫

বুধবার ২৮ মে, ২০২৫

কোরবানির আগে চুল-নখ কাটা কি উচিত? কী বলে ইসলাম

Cutting hair and nails before sacrifice
প্রতীকি ছবি/এআই জেনারেটেড/রাইজিং কুমিল্লা

কোরবানি একটি বিশেষ ইবাদত, যা ১০ জিলহজ ফজরের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যাদের কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়। তবে এই সময়ে কিছু বিশেষ আমল পালনের গুরুত্ব রয়েছে, যা অনেকেই হয়তো জানেন না।

এর মধ্যে অন্যতম হলো কোরবানি করার আগ পর্যন্ত শরীরের চুল, দাড়ি, নখ ও অন্যান্য পশম না কাটা।

চুল-নখ না কাটার বিধান: মুস্তাহাব না ওয়াজিব?

জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকে কোরবানি সম্পন্ন করা পর্যন্ত শরীরের কোনো চুল, দাড়ি, নখ বা পশম না কাটা মুস্তাহাব। এর অর্থ হলো, এই আমলটি পালন করলে সওয়াব পাওয়া যাবে, তবে পালন না করলে গুনাহ হবে না। হজরত উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, “যখন জিলহজের দশক শুরু হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কোরবানি করবে সে যেন কোরবানির আগে তার চুল-নখ না কাটে।” (মুসলিম, হাদিস নং-১৯৭৭; তিরমিজি, হাদিস নং- ১৫২৩)।

এই হাদিসের আলোকে বেশিরভাগ ফকিহ (ইসলামী আইনজ্ঞ) এটিকে মুস্তাহাব বলেছেন। তবে কিছু ফকিহ এটিকে ওয়াজিব বলেও মত দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, রাসুল (সা.)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল।

যাদের কোরবানি করার সামর্থ্য নেই, তারাও কি এই আমল করবেন?

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, যারা কোরবানি করার সামর্থ্য রাখেন না, তাদের জন্যও এই আমলটি করা উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে বলেছিলেন, “আমাকে কোরবানির দিন ঈদ উদযাপনের আদেশ করা হয়েছে, যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন।” ওই ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানিহা থাকে (অন্যের থেকে নেওয়া দুগ্ধ দানকারী উটনী), আমি কি তা দিয়ে কোরবানি করব?” জবাবে নবীজি (সা.) বললেন, “না, তবে তুমি নখ, চুল ও মোঁচ কাটবে এবং নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কোরবানি বলে গণ্য হবে।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-২৭৮৯; সুনানে নাসায়ী, হাদিস নং-৪৩৬৫)।

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, কোরবানি দিতে অক্ষম ব্যক্তিরাও চুল-নখ কেটে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে পূর্ণ কোরবানির সওয়াব লাভ করতে পারেন।

বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও কি একই নিয়ম?

শুধুমাত্র বড়দের ক্ষেত্রেই নয়, এই সময়ে বাচ্চাদের চুল-নখ কাটা থেকেও বিরত থাকা ভালো। সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়িরাও (সাহাবিদের পরবর্তী যুগের আলেম) এই আমলটি করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) একবার এক নারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যিনি জিলহজের দশকে তার ছেলের চুল কেটে দিচ্ছিলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বললেন, “সে (নারী) যদি কোরবানির দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতো অনেক ভালো হতো।” (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস নং-৭৫৯৫)।

বিশেষ ব্যতিক্রম: ৪০ দিনের সময়সীমা

তবে এই মুস্তাহাব হুকুম তাদের জন্য প্রযোজ্য, যারা এর ওপর আমল করলে নখ কাটা ও নাভির নিচের পশম পরিষ্কারের মেয়াদ ৪০ দিন অতিক্রম করবে না। যদি এই আমল করতে গিয়ে ৪০ দিনের বেশি সময় হয়ে যায়, তাহলে সেক্ষেত্রে ৪০ দিনের ভেতরেই চুল, নখ ও পশম পরিষ্কার করে নেওয়া জরুরি।

আরও পড়ুন