কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামে নতুন বাড়ি নির্মাণের জন্য মাটি সমান করার সময় শ্রমিকদের কোদালে উঠে এসেছে প্রাচীন আমলের লাল ইট।
এরপর কোদাল যত গভীরে গেছে, ততই স্পষ্ট হয়েছে লাল ইটের গাঁথুনির প্রাচীন দেয়াল। এই অপ্রত্যাশিত আবিষ্কারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই উৎসুক জনতার ভিড় বাড়ছে জসীম উদ্দিনের পুরনো ভিটেবাড়িতে। স্থানীয়দের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, এই মাটির নিচেই লুকিয়ে আছে কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক গুপ্তধন।
ঘটনাটি ঘটেছে ধর্মপুর গ্রামের চারাবাড়ি এলাকায়। বাড়ির মালিক জসীম উদ্দিন শ্রমিকদের দিয়ে মাটি সমান করার সময় প্রথম এই প্রাচীন ইটের সন্ধান পান। ইটগুলো আকারে বেশ বড় এবং দেখতে অনেকটা মোগল আমলের স্থাপত্যে ব্যবহৃত ইটের মতো। প্রথমে সাধারণ পুরনো ভিটা মনে হলেও, ইটের ধরণ দেখে জসীম উদ্দিন বুঝতে পারেন এর গুরুত্ব অনেক বেশি।
অবিলম্বে বিষয়টি জানানো হয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়কে। খবর পেয়েই অধিদপ্তরের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং প্রাথমিক পর্যায়ের খনন ও অনুসন্ধান কাজ শুরু করে।
রবিবার এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোছা. নাহিদ সুলতানা সাংবাদিকদের জানান, "আমরা এইমাত্র খনন কাজ শুরু করেছি। খনন কাজ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এটি সম্পন্ন হওয়ার পরই বিস্তারিত তথ্য জানানো সম্ভব হবে।" তিনি আরও বলেন, "আমরা পুরো এলাকাটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে একটি পূর্ণাঙ্গ খনন পরিকল্পনা গ্রহণ করব। মাটি খুঁড়ে পাওয়া নিদর্শন ও ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করে প্রাথমিক বিশ্লেষণের পর একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।"
জমির মালিক জসীম উদ্দিন নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, "বাড়ি তৈরির জন্য শ্রমিকরা যখন মাটি কাটছিল, তখনই কোদালে শক্ত কিছু একটা লাগে। পরে দেখা যায়, এগুলো লাল রঙের বড় আকারের ইট দিয়ে তৈরি গাঁথুনি। প্রথমে ভেবেছিলাম পুরনো কোনো বাড়িঘর হবে। কিন্তু ইটের ধরণ দেখে মনে হলো এটা সাধারণ কিছু নয়। তাই দেরি না করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে জানাই।"
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক সুমি আক্তার এই আবিষ্কারের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে বলেন, "১৭৩৩ সালে বাংলার নবাব সুজাউদ্দিন খান ত্রিপুরা রাজ্য আক্রমণ করে এই সমতল অঞ্চলকে বাংলার অন্তর্ভুক্ত করেন। ধর্মপুরের এই এলাকাটি ছিল ত্রিপুরা ও বাংলার মধ্যবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। মাটির নিচে পাওয়া এই প্রাচীন নিদর্শন সেই সময়ের সংযোগের প্রমাণ দিতে পারে।"
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC