মঙ্গলবার ১৫ জুলাই, ২০২৫

কুমিল্লা বোর্ডে এসএসসিতে সাফল্যের রহস্য জানালেন অনামিকা

Anamika reveals the secret to success in SSC at Comilla Board
ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে এবার চমক দেখিয়েছেন কুমিল্লা মহানগরীর দিগম্বরীতলা এলাকার কৃতি শিক্ষার্থী অনামিকা দেবনাথ। ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নিয়ে সে সর্বমোট ১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১২৬৪ নম্বর পেয়ে বোর্ডে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্থান অর্জন করেছে। তার এই অভাবনীয় সাফল্যে উচ্ছ্বসিত পরিবার, শিক্ষক এবং সহপাঠীরা।

অনামিকা দেবনাথের বাবা দিলীপ কুমার দেবনাথ উত্তরা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার এবং মা বিনা রাণী দেবনাথ কুমিল্লা সদর উপজেলার ঝাকুনিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। মেয়ের এমন ফলাফলে গর্বিত তারা।

এক নজরে অনামিকার প্রাপ্ত নম্বর:

অনামিকা এসএসসি পরীক্ষায় তিনি বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র মিলিয়ে ২০০ নম্বরের মধ্যে ১৯২, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র মিলিয়ে ২০০ নম্বরের ১৮৯, গণিতে ১০০ নম্বরের মধ্যে ১০০, বাংলাদেশ অ্যান্ড গ্লোবাল স্টাডিজে ৯৪, হিন্দু ধর্মীয় বিষয়ে ৯৭, পদার্থ বিদ্যালয় ৯৮, রসায়নে ৯৭, উচ্চতর গণিতে ৯৯, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে ৫০ এর মধ্যে ৪৮, জীব বিজ্ঞানে ১০০, শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খেলাধুলা ১০০ এবং ক্যারিয়ার এডুকেশন ৫০ এর মধ্যে ৫০ পেয়েছে।

সব মিলিয়ে অনামিকা ১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১২৬৪ নম্বর পেয়ে কুমিল্লা বোর্ডে নিজের স্থান সুদৃঢ় করেছে।

দ্বিতীয় স্থানে তাসনুভা ইসলাম তোহা:

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কুমিল্লা বোর্ডে ১২৬১ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী তাসনুভা ইসলাম তোহা। অনামিকার এই ফল তাকে অন্যদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রেখেছে।

সাফল্যের রহস্য জানালেন অনামিকা:

নিজের অসাধারণ ফলাফলের বিষয়ে জানতে চাইলে অনামিকা দেবনাথ ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজের সকল শিক্ষককে ধন্যবাদ জানান। সে জানায়, “ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজের সকল শিক্ষকের সঠিক তত্ত্বাবধান ও যুগোপযোগী পাঠদানের কারণেই এমন ফলাফল সম্ভব হয়েছে। আবাসিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষকরা সেখানে আমাদের কখনোই মা-বাবার শূন্যতা বুঝতে দেননি।”

অধ্যয়নের কৌশল সম্পর্কে অনামিকা বলেন, “প্রতিদিনের অধ্যয়নের জন্য গৎবাঁধা না পড়ে আমি বিশেষ শিডিউল করে নিতাম। বিশেষ করে পরীক্ষা শুরুর আগের তিন মাস আমি ক্লাসের পরও প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছি। নিয়মিত ক্লাস এবং মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করলে সকল শিক্ষার্থীই ভালো ফলাফল করতে পারবে।”

ভবিষ্যতে কী করবেন জানতে চাইলে অনামিকা বলেন, “আমি বড় হয়ে নিজে কিছু করতে চাই। রিসার্চ ভিত্তিক কাজ করতে আমি পছন্দ করি। তাই নিজে উদ্যোক্তা হবো।”

এদিকে অনামিকার মা, স্কুল শিক্ষিকা বিনা রাণী দেবনাথ মেয়ের সাফল্যে আনন্দিত। তিনি বলেন, “আমাদের মেয়ে ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। সে শিক্ষাজীবন শুরু করে কুমিল্লা নজরুল মেমোরিয়াল থেকে, এরপর মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নবাব ফয়জুন্নেছা স্কুল তারপর ফেনী ক্যাডেটে ভর্তি হয়। সেখানে শিক্ষক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকলের অবদানের কারণেই তার ভালো ফলাফল সম্ভব হয়েছে। এজন্য আমি সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞ।”

তবে, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক রুনা নাছরিন জানান, শিক্ষাবোর্ড থেকে পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় স্থান নির্ধারণ করা হয় না। শিক্ষার্থীরাই মার্কশিট থেকে তাদের মোট নম্বর যোগ করে নেয় এবং এর ভিত্তিতেই হয়তো এমনটা নির্ধারণ করে।

উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে কুমিল্লা বোর্ডে এ বছর পাসের হার ছিল ৬৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। এই কঠিন প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশে অনামিকার এমন সাফল্য সত্যিই প্রশংসনীয়।

আরও পড়ুন