অক্টোবর ১৮, ২০২৪

শুক্রবার ১৮ অক্টোবর, ২০২৪

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়: ‘নাক-মুখ চেপে বাথরুমে যায় ওরা’

Rising Cumilla - Cumilla University - 'They go to the bathroom holding their nose and mouth'
ছবি: প্রতিনিধি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) অ্যাকাডেমিক ভবনের শৌচাগারগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় বেহাল দশা দেখা দিয়েছে। খোদ প্রশাসনিক ভবনের নিচ তলার জনতা ব্যাংক সংলগ্ন বাথরুমগুলোর এমন চিত্র দীর্ঘ দিনের। শুধু নিচ তলায় নয়। এ চিত্র প্রশাসনিক ভবনের ৪১১ নম্বর কক্ষের পাশের বাথরুমগুলোরও।

প্রধান ফটকের ভেতরে নির্মিত ওয়াসরুমে লালচে বর্ণ ধারন করেছে, গন্ধে টিকে থাকা যায় না। অনেক সময় বাধ্য হয়ে ওই ওয়াসরুমে য়েতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

ওয়েবসাইটের তথ্যনুযায়ী, অনার্স-মাস্টার্স মিলিয়ে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। এই সাত হাজার শিক্ষার্থীর জন্য শৌচাগার ব্যবস্থা অপ্রতুল। তবে যে ক’টা আছে তা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিনদিন সেগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয় হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, নাক-মুখ চেপে বাথরুমে যেতে হচ্ছে তাদের। দীর্ঘ সময় ক্লাস-পরীক্ষা তারা থাকায় নিরুপায়। বাধ্য হয়েই ওই সব বাথরুম ব্যবহার করছেন শিক্ষার্থীরা।

চারটি অ্যাকাডেমিক ভবন ও প্রশাসনিক ভবন ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে করুণ দশা নিচতলার বাথগুলোর। কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের নিচতলার ১০৮ নম্বর কক্ষ সংলগ্ন বাথরুমের সামনে বেড়িকেট দেওয়া দীর্ঘদিন যাবৎ। কোথাও পানির ট্যাপ আছে, আবার কোথাও তা নেই। সপ্তাহের পর সপ্তাহ বেশিরভাগ শৌচাগার অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে। আবার কোথাও কবে নাগাদ বাথরুম পরিষ্কার করা হয়েছে তা বুঝে উঠা দায়।

ভবনগুলোর একটি টয়লেটেও সাবান-টিস্যুর ব্যবস্থা নেই। বাথরুমে পানি জমে রয়েছে, বেসিন ভাঙা , নেই আয়না-কল, টয়লেটজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে টিস্যু, ছেঁড়া কাগজ, ইটের টুকরাসহ নানা ধরনের আবর্জনার স্তুপ। আবার কিছু টয়লেটে বদনা নেই। লাইটিং এর ব্যবস্থা নেই বেশির ভাগ বাথরুমে। মশার উপদ্রবও অনেক। বিজ্ঞান অনুষদের নিচ তলার পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের টয়লেটগুলোর অবস্থা সবচেয়ে করুণ। এই ভবনের পশ্চিম পাশের কনফারেন্স রুম সংলগ্ন বাথরুমেগুলোতে কেউ একবার ভুল করে গেলেও দ্বিতীয়বার যাওয়ার সাহস করবে না। এমনটাই জরাজীর্ণ অবস্থা ওই বাথরুমগুলোর।

আরও দেখা গেছে, বেশিরভাগ অনুষদের বেসিনগুলো স্যাঁতস্যাঁতে, নেই ট্যাপ-আয়না। কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ তলার শৌচাগারগুলো কিছুটা ব্যবহার যোগ্য। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, প্রকৌশল অনুষদ ও আইন অনুষদের শৌচাগারগুলো দেখতে অনেকটা ভালো ও ব্যবহার উপযোগী। এ ভবনগুলোতে নোঙরা স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ একেবারেই তুলনামূলকভাবে কম।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেরিয়ার নিচ তলায় দু’টি বাথরুম থাকলেও সেগুলোর কোনটিই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে বিভিন্ন সময় ফিমেল শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। ক্যাফেটিয়ার দ্বিতীয় তলায় কিছু বাথরুম রয়েছে।তবে সেগুলো বিভিন্ন সংগঠনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া। ফলে বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ব্যতীত সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেগুলো ব্যবহার করতে পারছেন না। একটি বাথরুম খোলা থাকলেও তার অবস্থা নাজেহাল। অনেক সময় সেখানে গিয়েও বাথরুমের বেহাল দশা দেখে চলে আসেন শিক্ষার্থীরা।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আছমা আক্তার বলেন, ‘অ্যাকাডেমিক কাজে বেশিরভাগ সময় আমাদের ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে হয়। ফলে অনেক সময় প্রকৃতির ডাকে সারা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু আমাদের কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ওয়াশরুমগুলোর করুণ অবস্থা। বাধ্য না হয়ে কেউ যায় না। সবসময় অপরিষ্কার থাকে,দরজা লাগানো যায় না। ফলশ্রুতিতে ওয়াসরুমে যাওয়ার সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে থাকি। যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটে এই ভেবে। মাঝেমাঝে পানিও থাকে না। বেসিন-আয়না ভাঙ্গা, বেসিনে পানি আসে না। তাছাড়া ময়লা রাখার কোন ঝুড়িও নেই। অনেক সময় গন্ধে ওয়াশরুমের পাশ দিয়েও যাওয়া যায় না।’

ওমর ফারুক নামে গনিত বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিজ্ঞান অনুষদে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গনিত, পরিসংখ্যান এবং ফার্মেসি বিভাগ এই ৫ টি বিভাগ রয়েছে। এই বিভাগগুলোর ওয়াশরুমগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন একান্ত প্রয়োজন। প্রায় প্রতিটি বিভাগের ওয়াশরুমের বেসিনগুলো অকেজো। বেসিন থেকে পর্যাপ্ত পানি আসে না। তাছাড়া অনেক দরজা মেরামত করা দরকার। বেশিরভাগ সময় ওয়াশরুমগুলো অপরিস্কার থাকে। যা ব্যবহার অনুপযোগী।’

ছাত্র,পরামর্শক ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মো. আবদুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, ‘ ওয়াসরুম-বাথরুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিভাগের। বিভাগগুলো সচেতন থাকলে ওয়াসরুম অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকার কথা নয়। তবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি প্রশাসন অবশ্যই ভালোভাবে দেখবে বলে আমি আশা করি।’

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘অবশ্যই বিভাগগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে খেয়াল রাখা দরকার। তবে আমরা সেন্ট্রালি পদক্ষেপ নেবো।’