কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ৯ টি বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়ার ৬ মাস পার হলেও এখনো ফলাফল প্রকাশ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে বিপাকে পড়েছেন ওই বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীরা। তারা বিভিন্ন চাকুরি পরীক্ষায় আবেদন করতে পারছেন না বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো হলো— কলা ও মানবিক অনুষদভুক্ত ইংরেজি বিভাগ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত নৃবিজ্ঞান ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, ফার্মেসি, রসায়ন ও পরিসংখ্যান বিভাগ এবং আইন অনুষদভুক্ত আইন বিভাগ।
পরীক্ষা বিধিমালা অনুসারে সেমিস্টার পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের জন্য ৮ সপ্তাহ (৫৬ দিন) এবং ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের জন্য ১০ সপ্তাহ (৭০ দিন) সময় দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক পরীক্ষার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো ফলাফল প্রকাশ হয়নি। ফলাফল কবে প্রকাশ হবে তাও জানেন না সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীরা। এতে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা ও অন্যান্য আবেদন করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ বিভাগের মধ্যে ১০ বিভাগের স্নাতকের ফলাফল প্রকাশ হলেও ৯ বিভাগের ফলাফল এখনো প্রকাশ হয়নি। তবে কেন প্রকাশ হয়নি সে বিষয়ে রয়েছে ভিন্ন মত।
পরিসংখ্যান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী জানান, ‘আমাদের সাথে পরীক্ষা দেওয়া অন্য সব ডিপার্টমেন্ট রেজাল্ট পেয়ে গেছে অথচ আমরা পাই নাই । এটা আমাদের উপর অনেক বাজে প্রভাব ফেলছে, শুধু মানসিক প্রভাব নয় সব দিক দিয়েই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। না পারছি কোন চাকরিতে এপ্লাই করতে, না পারছি বাইরের ভার্সিটিতে হায়ার স্টাডিজ এর জন্য এপ্লাই করতে। মনে হচ্ছে জীবনের সব থেকে বড়ো ভুল কুমিল্লা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া। সামনে বড় বড় কয়েকটা সরকারি সার্কুলার আসছে মনে হচ্ছে ওগুলোতেও এপ্লাই করতে পারবো না।’
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, ‘স্নাতকের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রতিটি শিক্ষাথীর জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরীক্ষাসহ সব কিছু শেষ করেছি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু ৫ মাসের অধিক সময় পার হলেও আমাদের ফলাফল দেওয়া হচ্ছে না। পরীক্ষা কমিটির সভাপতিকে একাধিকবার বলার পরেও উনি আমাদের কোন কথা আমলে নিচ্ছেন না। এমনিতেই আমাদের করোনা সময়ের জট রয়েছে। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ হিসেবে ২০২২ সালে স্নাতক শেষ হওয়ার কথা থাকলে এখন পর্যন্ত রেজাল্ট পাইনি। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত না হওয়ায় বিভিন্ন চাকুরি পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারছি না।’
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাছান খান জানান, ‘আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত ফল প্রকাশ করার। শিক্ষার্থীদের ইমপ্রুভমেন্ট রেজাল্ট পেতে একটু সময় লাগছে যার কারণে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করতে দেরি হচ্ছে। ঈদের বন্ধের আগে আমরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে ফলাফল জমা দিয়ে দিবো।’
পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি আফরিনা আক্তার মিশু বলেন, ‘স্নাতক চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করতে হলে সব সেমিস্টারের ফলাফল প্রয়োজন। আমাদের শিক্ষার্থীদের ইমপ্রুভমেন্টের রেজাল্ট পেতে সময় লেগেছে। তাই চূড়ান্ত ফলাফলে একটু দেরি হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) আমরা ফলাফল পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে পাঠিয়ে দিবো। তবে কবে ফলাফল প্রকাশ হবে তা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর বলতে পারবে।’
স্নাতক চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ বিলম্ব কেন হচ্ছে এমন প্রশ্নে ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান
অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাস বলেন, “প্রায় দেড় থেকে দুই মাস আগে পরীক্ষার ফলাফল পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন কবে ফলাফল প্রকাশ হবে এটা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে বলতে পারবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ নূরুল করিম চৌধুরী বলেন, “অনেক সময় শিক্ষকরাও সঠিক সময়ে খাতা জমা দিতে পারেননা, তখন তাদেরকে ব্যাপারটা আমরা জানাই। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় একটা সংকট চলছে শিক্ষকরাও ক্যাম্পাসে কম আসেন। তাই এখন চাইলেও আমরা তাদেরকে বলতে পারছি না। রেগুলার রেজাল্টগুলোও দেরিতে জমা দেওয়া হচ্ছে ফলে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের সঠিক সময় বিলম্বিত হচ্ছে।”
সার্বিক বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ
হুমায়ুন কবির বলেন, “যে রেজাল্টগুলো আমাদের কাছে আসছে সেগুলো বিশেষ ব্যবস্থায় দ্রুত আমরা অনুমোদন দিয়ে দিচ্ছি। রেজাল্ট জমা না পড়লে আমাদের করার কিছু নেই। সঠিক সময়ে ফলাফল না দিতে পারলে তো সকল শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর। এক মাস যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ এটা তো কারোর কাছে কাম্য না। ”
ফলাফল প্রকাশে কেন বিলম্ব হচ্ছে এমন প্রশ্ন তিনি বলেন, ”এটা তো আমি বলতে পারবো না, বিভাগের রেজাল্ট কোন পর্যায়ে আছে, খাতা দেখা হয়েছে কিনা, রেজাল্ট তৈরি করার কি অবস্থা এগুলো না জেনে তো আমি বলতে পারবো না।”