ডিসেম্বর ৪, ২০২৪

বুধবার ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

কুমিল্লা বিমানবন্দরে সব থেকেও ৩০ বছর ধরে ‘ওড়ে না প্লেন’

RisingCumilla.Com - Cumilla Airport
ছবি কোলাজ: রাইজিং কুমিল্লা

কুমিল্লা, দেশের অন্যতম প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা। জনশক্তি রপ্তানিতে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে কুমিল্লা শীর্ষে। রেমিট্যান্সেও এ জেলা সেরা। ইপিজেড, বিসিক শিল্পনগরীসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবস্থানের কারণে বিমান চলাচলের চাহিদা এখানে ব্যাপক। কিন্তু ৩০ বছর ধরে কুমিল্লা বিমানবন্দর নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে।

এদিকে কুমিল্লা বিমানবন্দর পুনরায় চালু করতে স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। এই বিমানবন্দরটি চালু হলে স্থানীয়দের যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধি পাবে এবং জেলার অর্থনীতি গতি পাবে। বিশেষ করে, কুমিল্লা ইপিজেডে বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি বড় সুবিধা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সামান্য কিছু উন্নয়ন কাজ শেষ করলেই এই বিমানবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু করা সম্ভব।

জানা গেছে, ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কুমিল্লা নগরীর নেউরা-ঢুলিপাড়ার পাশে স্থাপিত হয় কুমিল্লা বিমানবন্দর। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে সেনাবাহিনী এ বিমানবন্দর ব্যবহার করতো। একই বছর বন্দরটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এরপর ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর বিমান ওঠানামা করে এ বিমানবন্দরে। কিছুদিন পর যাত্রী সংকটে তা বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর ১৯৯৪ সালে ফের বিমানবন্দরটি চালু করা হলেও পর্যাপ্ত যাত্রী না হওয়ায় মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এয়ারলাইন্সগুলো বিমান ওঠানামা বন্ধ করে দেয়। সে সময় আন্তর্জাতিক কোনো ফ্লাইট চালু না থাকলেও মূলত দেশের অভ্যন্তরের ফ্লাইটগুলো চালু ছিল এ বিমানবন্দরে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘৭৭ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বিমানবন্দরটিতে এখন ভুতুড়ে পরিবেশ। হঠাৎ দেখে বুঝার উপায় নেই এটি একটি বিমানবন্দর। বিমানবন্দর সড়কের বেহাল দশা, অধিকাংশ এলাকায় চাষ করা হয়েছে গরুর ঘাস। ভেতরে রয়েছে ছোট ছোট একাধিক পুকুর। বন্দরটি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হওয়ায় এবং যাত্রী ওঠানামা না করায় বিমানবন্দরের জন্য নির্মিত সড়কটি ঢুলিপাড়া, রসুলপুর ও রাজাপাড়া এলাকাবাসী ও সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।’

প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বর্তমানে কুমিল্লা বিমানবন্দর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩০-৩৫টি বিমান দৈনিক সিগন্যাল ব্যবহার করছে।

এতে প্রতি মাসে আড়াই থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হচ্ছে সরকারের। বেশি চলাচল করে ভারতে অভ্যন্তরীণ রুটের বিমান। আগরতলা বিমানবন্দরে যাওয়া বিমান এই রুটে চলে। এছাড়া রয়েছে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুরের বিমান। বর্তমানে এ বন্দরে ২৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন।

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিমানবন্দরের সিএনএস প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কুমিল্লা বিমানবন্দরটি সরকারের একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। এই বিমানবন্দর থেকে এখন প্রতি মাসে আড়াই থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হচ্ছে সরকারের। বর্তমানে ৩০-৩৫টি বিমান ডিভিওআর ও ডিএমই সিগন্যাল ব্যবহার করে। বিমান ওঠানামা না করলেও এটা থেকে ভালো রাজস্ব আয় হচ্ছে। বর্তমানে বিমানবন্দরটি সেনাবাহিনীর সাথে ভূমি জটিলতা আছে। এই জটিলতা শেষ হলে কুমিল্লা বিমানবন্দর চালু করা সম্ভব।’

এ বিষয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রবাসে অবস্থানের দিক থেকে কুমিল্লার মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। রেমিট্যান্সেও সেরা কুমিল্লা জেলা। প্রবাসীদের কথা বিবেচনা করে হলেও কুমিল্লা বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু করা সময়ের দাবি। কুমিল্লা বিমানবন্দর চালু হলে কুমিল্লার মানুষের জীবন যাত্রার মান আরও উন্নতি হবে।’