ডিসেম্বর ১২, ২০২৪

বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

কুমিল্লা কি অ্যামাজন জঙ্গল থেকে এসেছে—প্রশ্ন জামায়াত আমিরের

Shafiqur Rahman
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান | ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন নিয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, বিগত সরকারের (আওয়ামী লীগ) আমলে কুমিল্লা নামকে অপমান করা হয়েছে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কুমিল্লার সম্মান (বিভাগ ঘোষণা) ফিরিয়ে দিন।

আজ শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে কুমিল্লা মহানগর জামায়াত ইসলামীর কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মত দেন তিনি।

কুমিল্লা বিভাগ নিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আপনারা (কুমিল্লাবাসী) বিভাগ পাইলেন না, এটা আপনাদের কপালের দোষ, কারণ আপনাদের জেলার নাম কুমিল্লা। কুমিল্লা জেলাটা কি অ্যামাজন জঙ্গল থেকে এখানে এসে পড়েছে? এটা কি বাংলাদেশের অংশ নয়? মহান মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লার কি কোনও ভূমিকা নাই? যদি থাকে তাহলে কুমিল্লা নামে বিভাগ দিতে অসুবিধা কোথায়? কেন সেটা আটকে রেখেছিলেন? শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, তার সুকীর্তি অথবা অন্যকিছু সেটার মূল্যায়ন জনগণ করেছে, জনগণ করবে, করতে থাকুক। কিন্তু আপনি ওই জায়গার জের ধরে কুমিল্লা বিভাগ দেবেন না! একটা জেলাকে তার নাম ধরে অপমানিত করবেন, আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না।’

ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এটা একটা জুলুম। একটা এলাকার লোকদের ওপর নিঃসন্দেহে একটি জুলুম। অনেকগুলো জুলুমের মধ্যে এটাও একটা জুলুম। আমরা বর্তমান সরকারকে অনুরোধ করবো তার (কুমিল্লা বিভাগের) তো সবকিছুই রেডি আছে। আপনারা মেহেরবানি করে তাদের এই হকটাকে দিয়ে দেন।’

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার কুমিল্লা জেলার নামকে ‘অসম্মান’ করেছে উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘নামের জন্য কুমিল্লাসী যুদ্ধ করে নাই। কুমিল্লার মানুষ বলে নাই সুরমা নদী কিংবা কুশিয়ারা নদীর নামে বিভাগ করেন। কুমিল্লাবাসী এটা বলেন নাই। তারা বলেছেন, আমাদের পরিচয়েই আমাদের বিভাগটা দিয়ে দেন। এমনকি বৃহত্তর নোয়াখালীর লোকেরা বলেন নাই যে লক্ষ্মীপুরের নামে বিভাগ দেন। কেউ বলেনি ফেনীর নামে দেন। তাহলে তারাই যদি না বলে তাহলে কুমিল্লা নামে বিভাগ দেবেন না কেন? এ বিভাগ হওয়া উচিত। বরঞ্চ আরেকটা কারণে হওয়া উচিত, একটি নামের প্রতি অপমান করা হয়েছে, যত তাড়াতাড়ি পারেন কুমিল্লার সম্মানটা ফিরিয়ে দেন। আমরা এমন একটা বাংলাদেশ গঠন করতে চাই যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না।’

কুমিল্লা বিমানবন্দর নিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কুমিল্লা বিমানবন্দর একটি প্রাচীন বিমানবন্দর। এখানে বিশ্বযুদ্ধের সময় ঘাঁটি বসানো হয়েছিল। এরকম ঘাঁটি যেগুলো ছিল বিমানবন্দর হয়ে গেছে শুধু দুটি ছাড়া। একটা কুমিল্লা আরেকটা শমসেরনগর। শমসের নগর অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয় কারণ সিলেটে একটা বিমানবন্দর আছে। কিন্তু কুমিল্লা অনেকগুলো জেলাকে ক্রস করে। কুমিল্লা বিমানবন্দর খুবই যৌক্তিক দাবি। আমরা এ দাবিকে সমর্থন জানাই। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারকে আমরা অনুরোধ করব বিমানবন্দরটি করার জন্য।

উল্লেখ্য, ১৯ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া জামায়াতের এই কর্মী সম্মেলনে জনতার ঢল নামে। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা মহানগর জামায়াত ইসলামীর আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

এদিন নগরীর কান্দিরপাড়, টমছম ব্রিজ রোড, ঝাউতলা রোড, জিলা স্কুল রোড, সার্কিট হাউজ রোড, প্রেস ক্লাব মোড়সহ নগরীর সবকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট জনসমুদ্রে পরিণত হয়। নেতাকর্মীদের স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা নগরী। টাউন হল মাঠ ছাড়াও নারী নেতাকর্মীদের জন্য আলাদাভাবে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে প্যান্ডেল স্থাপন করা হয়।