কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় নবাব ফয়জুন্নেছার স্মৃতি বিজড়িত জমিদার বাড়িটি এশিয়ার সৌন্দর্যমণ্ডিত বাড়িগুলোর অন্যতম। দীর্ঘদিন অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকা বাড়িটি অবশেষে ‘নবাব ফয়জুন্নেছা জমিদার বাড়ি যাদুঘর’ হিসেবে সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
সোমবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় জাদুঘরের শাখা হিসেবে নবাব ফয়জুন্নেছা জমিদারবাড়ি জাদুঘরের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
এসময় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মহীয়সী নারী নবাব ফয়জুন্নেছা লাকসামসহ সারা দেশের নারীশিক্ষা প্রসারে যে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখে গেছেন, এই জাদুঘর স্থাপনের উদ্যোগের ফলে তা সর্বস্তরের মানুষ জানতে পারবে।’
নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর (মেজর) মিতা সফিনাজ সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান, পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান, লাকসাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউনুছ ভূঁইয়া, ওয়াকফ প্রশাসক গিয়াস উদ্দিন।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লার লাকসাম পৌরশহরের পশ্চিমগাঁও এলাকায় ডাকাতিয়া নদীর তীর ঘেঁষে ঐতিহাসিক নবাব ফয়জুন্নেছার বাড়িটির অবস্থান। কথিত আছে, উপমহাদেশের একমাত্র মহিলা নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর বিয়ের ১৭ বছর পর তিনি জানতে পারেন তার স্বামী হাছান আলী জমিদারের আরেকজন স্ত্রী রয়েছে। অসাধারণ ব্যক্তিত্ববান, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, দৃঢ়চেতা নবাব ফয়জুন্নেছা এটি মানতে পারেননি। তিনি পৃথক থাকার জন্য সাড়ে ৩ একর জমির উপর তার বিয়ের কাবিনের ১ লাখ ১ টাকা দিয়ে এই বাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়িটি নির্মাণ করতে প্রায় ৩ বছর সময় লাগে। বৃটিশ আমলে সিমেন্ট, রড, চুন ও সুরকি দিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। বাড়ির পশ্চিমপাশেই ১০ গম্বুজবিশিষ্ট একটি অনিন্দ্য স্থাপত্যশৈলীর পারিবারিক মসজিদ। মসজিদের পাশেই রয়েছে পারিবারিক কবরস্থান, যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন নবাব ফয়জুন্নেছাসহ তাঁর পরিবারের অন্যান্য বংশধর।
নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন। তিনি মৃত্যুর পূর্বে বাড়িটি সরকারের নিকট ওয়াকফ করে যান। কালের বিবর্তনে বাড়িটি ঐতিহাসিক বাড়ি হিসেবে দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।