একটি বিদ্যালয়ের পাঠদানসহ শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার নেতৃত্ব দেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটি শূন্য রেখেই চলছে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ৫২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষকরা। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নিয়মিত শ্রেণি শিক্ষকরা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট ১০৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে ৫২টিরই প্রধান শিক্ষকের পদ অনেক দিন ধরে শূন্য। এসব বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া উপজেলায় ৪৩টি সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা এক সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘একসঙ্গে দুইটা দায়িত্ব পালন করা যায় না। প্রশাসনিক দিক সামাল দেব, নাকি বাচ্চাদের পড়াব। এটা বুঝি না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে আমি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। এখানে প্রধান শিক্ষকসহ দুজনের পদ পাঁচ বছর ধরে খালি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয় সামাল দেওয়া খুব কঠিন।’
শিক্ষক স্বল্পতায় থাকা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিজেদের ইচ্ছে মতো ক্লাস নিয়ে থাকেন। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে অফিসের কাজের পাশাপাশি এক শিক্ষককে দুটি ক্লাসে ও পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হয়। তাই শিক্ষকরা একদিকে অতিরিক্ত কাজ আর পাঠদান কার্যক্রমে ক্লান্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে এক বা দুটি বিষয় সারাদিন পড়া নিয়ে শিক্ষার্থীরাও বিরক্ত হচ্ছে। আর এ কারণেই অনেক বিদ্যালয় ক্ষুধে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় যেতে আগ্রহ হারাচ্ছে। ওইসব বিদ্যালয় সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল ও আশানুরূপ হচ্ছে না। যেসব বিদ্যালয়ের ফলাফল ভালো হয় তারাও আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করতে না পারায় হতাশায় বাড়ছ।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মকিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী প্রধান শিক্ষক মো: এরশাদ মিয়া বলেন, উপজেলার অনেক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য। তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন পিটিআইতে। জরুরি ভিত্তিতে শূন্য পদগুলোতে শিক্ষক দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদ ইবনে হোসাইন বলেন, ‘সহকারী শিক্ষকের পদ খালি থাকলেও শিক্ষক ঘাটতি নেই আমাদের। একজন শিক্ষকের অনুকূলে ৪০ জন শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের সহকারী শিক্ষক যথেষ্ট রয়েছে। প্রধান শিক্ষক খালির বিষয়টি শিগগিরই সমাধান হবে। অনেক শিক্ষক পদোন্নতি পাচ্ছেন। শিক্ষকরা পদোন্নতি পেলে প্রধান শিক্ষকের সংকট নিরসন হয়ে যাবে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত অবহিত করা হচ্ছে। আশা করছি, শিগগিরই এর সমাধান হবে।