তীব্র গরমে যখন জনজীবন অতিষ্ঠ, কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত বাতাস, ঠিক তখনই কুমিল্লাজুড়ে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভা প্রকৃতিতে এনে দিয়েছে এক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। কাজী নজরুল ইসলামের সেই কালজয়ী গান যেন মূর্ত হয়ে উঠেছে কুমিল্লার পথে-প্রান্তরে – ‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জরি কর্ণে/ আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’।
কৃষ্ণচূড়ার রক্তরাঙা ফুলের মনোমুগ্ধকর শোভা কেবল গ্রামের সবুজ প্রান্তর আর মেঠোপথেই সীমাবদ্ধ নেই, তা ছড়িয়ে পড়েছে কুমিল্লা নগরীর আনাচে-কানাচেও। বৈশাখের শুরুতেই নগরীর রাস্তার মোড়, বিভিন্ন ভবন ও অফিস পাড়ায় গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়ার লাল রং এক বৈচিত্র্যময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। গ্রীষ্মের এই শুরুতে কুমিল্লার প্রকৃতি যেন সেজে উঠেছে রক্তিম আভায়।
যে ফুলগাছের দিকে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়, সেই কৃষ্ণচূড়ার আদিনিবাস যদিও পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কারে, তবুও সমগ্র এশিয়া জুড়েই এর খ্যাতি। ভারত ও পাকিস্তানে এই ফুল গুলমোহর নামেই পরিচিত। বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়ার ডালে ফুল ফোটে চৈত্রের শেষ দিকে এবং বৈশাখের শুরুতেই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে তার রক্তরাঙা রূপ।
কেবল গ্রামেই নয়, নগর জীবনেও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই রক্তরাঙা কৃষ্ণচূড়া। কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে, গুরুত্বপূর্ণ অফিস ও বাসভবনে অসংখ্য কৃষ্ণচূড়া গাছ শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে দাঁড়িয়ে আছে। এসব গাছে ফোটা লাল ফুল পুরো শহরকে এক নতুন রঙে রাঙিয়ে তুলেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা প্রশাসকের বাসভবন ও কার্যালয়, পুলিশ সুপারের বাসভবন ও কার্যালয়, নগরীর পুলিশ লাইন এলাকা, শিল্পকলা একাডেমি, নগর উদ্যান, গণপূর্ত ভবনের সামনে, রেল স্টেশন, বাদুরতলা চার্চের সামনে, ঐতিহাসিক রাণীর কুটিরের ভেতরে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিস আঙ্গিনায় ও ধর্মসাগরের পূর্বপাড়ে, কুমিল্লা জিলাস্কুল চত্বরে, চকবাজার রোডের আমীরদীঘির উত্তর পাড়ে এবং হাউজিং এস্টেটের অধিকাংশ বাড়ির সামনে কৃষ্ণচূড়ার উজ্জ্বল উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। এমনকি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু গাছেও এখন রক্তিম ফুল শোভা পাচ্ছে।
[caption id="attachment_35031" align="alignnone" width="1506"] কুমিল্লা নগরীর রেলস্টেশনে ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া | ছবি: রাইজিং কুমিল্লা[/caption]
শহরের বাইরে বুড়িচং উপজেলার কংশনগর বাজার, জাফরগঞ্জ বাজার এবং দেবীদ্বার নিউমার্কেট এলাকাতেও কৃষ্ণচূড়া গাছে ফুলের মনোরম দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেরুন্নেছা বলেন, “কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস মাদাগাস্কার দ্বীপে। ভারতীয় উপমহাদেশে এটি গুলমোহর নামেও পরিচিত। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এই গাছ প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়। কৃষ্ণচূড়া মাঝারি আকারের পত্রঝরা বৃক্ষ। এর চারা বীজ থেকে তৈরি হয়। শীতকালে গাছের সব পাতা ঝরে যায় এবং প্রজাতিভেদে ফুল ফোটে। এর ফুলগুলো চারটি বড় পাপড়িযুক্ত হয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “অনেক বড় গাছে ফুল ধরতে সময় লাগে, তবে ছোট গাছেও ফুল ফুটতে দেখা যায়। শীর্ষ মঞ্জরিতে ফুল হয় এবং এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত এই ফুল তার সৌন্দর্য ধরে রাখে। বসন্তে শুরু হওয়া এই ফুলের সৌন্দর্য বর্ষায় শেষ হয়।”
কৃষ্ণচূড়া সাধারণত লাল রঙের হলেও হলুদ ও সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়াও কালেভদ্রে চোখে পড়ে। স্থানীয়দের অনেকের বিশ্বাস, রাধা ও কৃষ্ণের নামের সঙ্গে মিল রেখেই এই ফুলের নামকরণ হয়েছে কৃষ্ণচূড়া। এই ফুল ফোটার জন্য ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়, সম্ভবত গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহেই এর আগমন ঘটে।
কুমিল্লার সচেতন নাগরিক সমাজ মনে করেন, নগরীর কৃষ্ণচূড়া গাছগুলোর সঠিক পরিচর্যা করা প্রয়োজন। একইসাথে, নতুন করে প্রশস্ত করা রাস্তার মাঝে ও পাশে আরও কৃষ্ণচূড়ার চারা রোপণ করে নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা। কৃষ্ণচূড়ার এই রক্তিম শোভা শুধু প্রকৃতিকেই রাঙিয়ে তোলে না, বরং নগরবাসীর মনেও এক অনাবিল আনন্দ আর স্নিগ্ধতার পরশ বুলিয়ে দেয়।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC