
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কেউ বলেন ‘কার্তিক ব্রত’। কোথাও এ উৎসবের নাম ‘রাখের উপবাস’। আবার অনেকে ‘গোঁসাইর উপবাস’ ও ‘ঘৃতপ্রদীপ প্রজ্বালন’ উৎসব নামেও জানেন। কথিত আছে, বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগ থেকে বাঁচতে কার্তিক মাসে উপবাস পালন করে আশ্রম প্রাঙ্গণে প্রদীপ ও ধূপ জ্বালাতে বলেছিলেন বাবা লোকনাথ। তখন থেকে প্রতিবছর কার্তিক মাসের শেষ ১৫ দিনের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উৎসবটি পালন করেন।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দ্বিতীয় দিন দুপুর থেকে কুমিল্লা নগরীর লাকসাম রোডস্থ মহেশাঙ্গণে লোকনাথের আরাধনায় নিমগ্ন থেকে রাখের উপবাস পালন করেন বিভিন্ন জেলা- উপজেলা হতে আগত হাজারো লোকনাথ অনুসারীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দুপর থেকে কলাপাতা ফুল, ধান-দুর্বা মাটির প্রদীপ, ঘি, ডাব ও দুধ নিয়ে একে একে মন্দিরে ভিড় করতে থাকে লোকনাথ ভক্তরা। যত বেলা গড়াতে থাকে ততই বাড়তে থাকে মন্দিরের লোকনাথ ভক্তদের ভিড়।
বাড়ি থেকে আনা ফলমূল, ডাব ও দুধ সবকিছু বাবা লোকনাথের নামে অর্পণ করে আগরবাতি, মোমবাতি জ্বালিয়ে উৎসবের সূচনা করে লোকনাথ ভক্তরা মন্দিরে পূজা অর্চনা শেষ করে।
ব্রত উদযাপনে আসা এক ভক্তের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই ব্রতের আগের দিন সংযম করতে হয়। তারপর উপবাস থেকে সন্ধ্যায় আগে ধুপ, প্রদীপ ইত্যাদি নিয়ে বসতে হবে। আরাধনায় বসে প্রদীপ জ্বালানোর পর কথা বলা বন্ধ করে দিতে হয়। সংযম, মনোব্রত ও মনটাকে একাত্মচিত্তে লোকনাথকে ডাকতে হয়। প্রদীপ যখন জ্বলানো শেষ হবে, মন্দির থেকে চাল ও কলা দিয়ে দেয়। সেই চাল কলা দিয়েই পুণ্যার্থীরা উপবাস ভঙ্গ করবেন।
কুমিল্লা মহেশাঙ্গণ লোকনাথ স্মৃতি তর্পণ সংঘের সাধারণ সম্পাদক হারাধন ভৌমিক ও লোকনাথ যুব সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক লিটন চন্দ্র দাস এর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই ব্রতের আগের দিন সংযম করতে হয়। তারপর উপবাস থেকে সন্ধ্যায় আগে ধূপ-প্রদীপ ইত্যাদি নিয়ে বসতে হয়। আরাধনায় বসে প্রদীপ জ্বালানোর পর কথা বলা বন্ধ করে দিতে হয়। সংযম, মনোব্রতের মাধ্যমে একাগ্রচিত্তে লোকনাথকে ডাকতে হয়। প্রদীপ আলো নিভে গেলে মন্দির থেকে ফলফলাদি ও চড়ুই প্রসাদ দেওয়া হয় পূণ্যার্থীদের।
মন্দিরে আসা আরেক ভক্ত বলেন, দীর্ঘদিন যাবত লোকনাথ বাবার এ ঘিয়ের প্রদীপ প্রজ্বলন রাখের উপবাস পালন করে আসছি। বাবা কৃপায় পরিবার পরিজনদের নিয়ে ভালো আছি। বাবার এ উপবাস করলে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পৃথিবীর সব মানুষ এ ঘিয়ের প্রদীপ প্রজ্বালন করতে পারেন। কারণ বাবার কাছে মানুষের কোন পার্থক্য নাই।’